সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক আন্দোলন, সশস্ত্র সংগ্রাম কিংবা সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার তৎপরতা আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে ইসলামপন্থি রাজনীতির কোনো একক বা সমরূপ চেহারা নেই। কারও কাছে এর লক্ষ্য ওপর থেকে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে সমাজকে পরিবর্তিত করা। আবার কারও কাছে সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে রাজনীতিকে প্রভাবিত করা। সমাজে ইসলাম কায়েম করা সবার কাছে রাজনীতিও নয়। উল্লেখযোগ্য কিছু ধারা আছে যাঁরা ব্যক্তিকে ইসলামের পথে আনার মাধ্যমে সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠার নীতি অনুসরণ করেন।
সুফিবাদী ধারা ধর্মমত নির্বিশেষে মানুষকে গুরুত্ব দিয়ে অনেকের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান নিয়ে হাজির হয়। ইসলামী রাষ্ট্র অতীতে আমরা অনেক দেখেছি; বর্তমান বিশ্বেও তা দুর্লভ নয়। অতীতে বিভিন্ন স্থান ও কালে ইসলামী রাষ্ট্রের রূপ ভিন্ন ভিন্ন দেখা গেছে। ইসলামের শুরুতে খেলাফত স্বল্পস্থায়ী ছিল, তবে রাজতন্ত্র অনুমোদিত ছিল না। কিন্তু ইমাম হোসেনের ঘাতক ইয়াজিদকে দিয়েই রাজতন্ত্র শুরু, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত কথিত ইসলামী শাসনব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত। রাজতন্ত্র অনুমোদিত ইসলামী আইন বিধান ও প্রতিষ্ঠান সেখানে সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর। অন্যদিকে, পাকিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্র। বাংলাদেশ, আফগানিস্তানসহ কয়েকটি রাষ্ট্রে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম। ইরান ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচালিত। এই ব্যবস্থায় ধর্মীয় নেতা, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্টের একটি সমন্বয় তৈরি করা হয়েছে।
পুঁজিবাদ সম্প্রসারণে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা খুবই সহায়ক হয়েছিল। আর উপনিবেশগুলোতে রাজনৈতিক ক্ষমতা সম্প্রসারণে মিশনারিদের বিভিন্ন মাত্রার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ভূমিকা ছিল স্থানীয় ধর্মীয় নেতা ও ক্ষমতাবানদেরও। আশির দশক থেকে ইসলামী 'মৌলবাদী' তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে প্রান্তস্থ দেশগুলোতে বিপন্ন দশা ও সাম্রাজ্যবাদ নিয়ন্ত্রিত বিশ্বরাজনীতি সম্পর্কিত। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আশির দশক পর্যন্ত ধর্মপন্থি শক্তিগুলোকে সমাজতন্ত্র ও সব রকম মুক্তির লড়াইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। এই পর্যায়ের সর্বশেষ বড় উদাহরণ আফগানিস্তান। প্রথমে মুজাহিদিনদের মাধ্যমে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সমর্থিত সরকার উচ্ছেদ করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সময় আফগান মুজাহিদিনদের সব রকম পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে তারা।