বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে ১৯৮৭ সালে স্বাস্থ্যের নানা ঝুঁকি বিশেষ করে তামাকের মৃত্যু ও অসুস্থতা রোধে বছরে একটি দিন ধূমপান থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করে এপ্রিলের ৭ তারিখ তামাকমুক্ত দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত হয় এবং এক বছর সেটা পালনও করা হয়েছে। সেটা ছিল ২৪ ঘণ্টা ধূমপান না করার অঙ্গীকার। কিন্তু ১৯৮৮ সালে আর একটি রেজ্যুলিউশান গ্রহণ করে মে মাসের ৩১ তারিখ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এই দিনেও ২৪ ঘণ্টা কোন প্রকার তামাকদ্রব্য ব্যবহার না করার অঙ্গীকার করা হয়।
তামাকের প্রসঙ্গ আসলেই তার সাথে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং মৃত্যুর পরিসংখ্যান আমরা পাই। তার সাথে আরও পাই তামাক কোম্পানিগুলো কী করে সমাজে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে, কী করে সরকারের নীতি নির্ধারণে হস্তক্ষেপ করে তারা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন কঠিন করে রাখছে। তামাক পণ্যের ওপর করারোপ করতে গেলে বাধা দিচ্ছে, আবার কোম্পানি নিজেই সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী হিসেবে পুরস্কার বাগিয়ে নিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাকমুক্ত দিবস নিয়ে ভাবলেও তার সব সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতিতে একটি সনদ করতে পেরেছে মাত্র ২০০৪ সালে, যা ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশান অন টোবাকো কন্ট্রোল (সংক্ষেপে এফসিটিসি) নামে পরিচিত এবং এই সনদের আলোকে সরকারগুলো নিজ নিজ দেশে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করে। বাংলাদেশ সরকার এই ব্যাপারে খুব তাড়াতাড়ি সাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন 'ধূমপান ও তামাকদ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫' প্রণীত হয়েছে যা ২০১৩ সালে একবার সংশোধিত হয়েছে, এখন আবার সংশোধনের প্রক্রিয়ায় আছে। আইনকে বাস্তবায়নযোগ্য করে তোলার চেষ্টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য তামাক যে হুমকি সৃষ্টি করেছে, তা নিয়ে আর কোন বিতর্ক নেই। প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর ১৯% তামাক সেবনের কারণে হয়, সংখ্যায় বছরে গড়ে ১,৬১,০০০ মানুষ তামাক সেবনের কারণে মারা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৮ সালে এই তথ্য দিয়েছে। হৃদরোগ সংক্রান্ত মৃত্যুর ২৪% তামাকসেবীদের হয়। এত অসুস্থতা, এত অকালমৃত্যু একটি জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে।