বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান নিম্নগামী। এ নিয়ে আমরা হা-পিত্যেশ করছি। লেখালেখি হচ্ছে। সেমিনার, টক শো করছি।
তর্ক-বিতর্ক চলছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে নীতি-নৈতিকতা লাইফ সাপোর্টে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে সে বিষয়ে আমরা অপেক্ষাকৃত কম মনোযোগী। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে পত্রিকায় যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তাতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির ভয়ংকর চিত্র বেরিয়ে এসেছে। মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিবেদন মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০ খাতে বিধিবহির্ভূত আর্থিক সুবিধা নেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে সব কটিকে দুর্নীতি মানতে নারাজ।
যেমন—সরকারের বিভিন্ন অফিসে কর্মরতদের টেলিফোন-মোবাইল-ইন্টারনেট ভাতা দেওয়ার নিয়ম আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে টেলিফোন-মোবাইল-ইন্টারনেট ভাতা দেওয়া হলে তা দুর্নীতি হবে কেন? বিচারক ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাকে সরকারি কোষাগার থেকে ল্যাপটপ, ট্যাব, গাড়ি ও গাড়ির জ্বালানিসহ নানা ভাতা ও গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ খরচ দেওয়ার বিধান আছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ল্যাপটপ, ট্যাব, গাড়ি বা গাড়ির জ্বালানি কিংবা রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা—এ সব কোনো কিছু দেওয়ার বিধান নেই। তাহলে শুধু বই ভাতা দেওয়া হলে তা দুর্নীতি হবে কোন যুক্তিতে?
প্রতিবেদনে সিটি করপোরেশনের বাইরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-জনবলকে সিটি করপোরেশনের হিসাবে বাড়িভাড়া প্রদানকে দুর্নীতির খাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের বাইরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে শিক্ষক-জনবলকে বাসস্থান দিতে না পারলে তাঁরা যদি সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে বাড়িভাড়া করে থাকেন, তাহলে সিটি করপোরেশনের হিসাবে বাড়িভাড়া প্রদান দুর্নীতি কেন হবে? বিশ্ববিদ্যালয় মফস্বলে কিন্তু বাসস্থান তো মফস্বলে নয়। সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে বাড়িভাড়া করার কারণে তাঁদের তো মফস্বল এলাকার চেয়ে অপেক্ষাকৃত অধিক হারে বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে। তবে বেশ কিছু খাতে অর্থ ব্যয় অবশ্যই দুর্নীতি। বেতনের বাইরে নানা নামে উপাচার্য হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণের কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।