অধ্যাপক প্রমথনাথ বিশী একদা বলেছিলেন, বাংলাদেশের নদীকে যে নিবিড়ভাবে জানতে পারে না, সে কিভাবে বাংলাদেশকে জানবে? বঙ্গোপসাগরের নরম বেলাভূমিতে মিলিত হয়েছে সমুদ্র ও নদী। নদী-নারী, সমুদ্র-পুরুষ, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ উত্তাল ঢেউয়ের দোলায় তাদের মিলন ঘটে। কোমল, পাললিক বঙ্গ তাদের শিশু (চলনবিল, কলকাতা ১৯৫৭, পৃষ্ঠা ১৭-১৮)।
ঐতিহাসিক কাল থেকে সমাজ-সংস্কৃতি-অর্থনীতি-রাজনীতি আর বাংলাদেশের ভৌগোলিক গঠনে নদীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নদী বাংলাদেশের মাটি আর মানুষের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। কিন্তু শুধু কি বাংলাদেশ? ভারতবর্ষের ইতিহাসের সঙ্গেও তো নদীর ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। নদীকে সম্বল করে পৃথিবীর ইতিহাসে কত সভ্যতা গড়ে উঠেছে। সেই ব্যাবিলন থেকে শুরু করে মেসোপটেমিয়া—সবই তো নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা। এত বছর পর বাংলাদেশের নদ-নদী, নদীতীরবর্তী জনপদ আর ভারতের নদ-নদী সবই কেমন এক গভীর সংকটের মুখে। আসলে আমাদের জীবনযাত্রা ও অস্তিত্ব অনেকটাই তো নদীর ওপর নির্ভরশীল। সুদূর অতীতকাল থেকে আজ অবধি দেশের ভৌগোলিক অবস্থানে তার পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু এই নদীকেন্দ্রিক সভ্যতাতেও এসেছে সীমাহীন নৈরাশ্য, বেদনা। অজস্র নদীর মিলনমেলার উৎসক্ষেত্ররূপে নদীমাতৃক দেশ পরিচিত থাকলেও এখন মাত্র কয়েকটা হাতছানি দিয়ে পূর্বপরিচয় বজায় রাখতে যেন দারুণ লজ্জা পাচ্ছে।