বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের অনন্য নাম আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী। ৮৮ বছরের জীবনে কত রাজনৈতিক কলাম লিখেছেন তা হিসাব করে বের করতে যে কোনো গবেষকেরই খুব কম সময় লাগবে না। দুই হাতে লেখা বলে একটি কথা আছে। কথাটা আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরীর ক্ষেত্রে যেন শতভাগ সত্য। কথাটা বুঝি তাকে মনে রেখেই তৈরি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ছাত্র অবস্থায় ‘দৈনিক ইনসান’ পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে যে জীবনের শুরু তার সমাপ্তি ঘটেছে ২০২২ সালের ১৯ মে, নিজের দেশ থেকে বহু বহু দূরে সুদূর লন্ডনের একটি হাসপাতালে। আর কোনোদিন হাতে কলম তুলে নেবেন না। কিন্তু তিনি জীবনভর যা লিখেছেন তার সবগুলোর জন্য না হলেও মাত্র একটি কবিতার জন্য তাকে বাঙালি জাতি চিরদিন মনে রাখবে, স্মরণ করবে। বলবে, গাফ্্ফার চৌধুরী, আমরা কি আপনাকে ‘ভুলিতে পারি’?
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার বীরত্বপূর্ণ আন্দোলন স্তব্ধ করার জন্য তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী চরম নিষ্ঠুরতার আশ্রয় নিয়ে গুলিবর্ষণ করেছিল। শহীদ হয়েছিলেন বরকত, রফিক, জব্বারসহ বেশ কয়েকজন। গাফ্্ফার চৌধুরী মাথার খুলি উড়ে যাওয়া এক শহীদের রক্তাক্ত শরীর দেখেছিলেন। ঢাকা কলেজের ছাত্র ১৮ বছরের এক তরুণ গাফ্্ফার চৌধুরীর হৃদয়ে তখন যে রক্তক্ষরণ শুরু হয়, তাই তাকে রচনা করতে প্রাণিত করে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’ অতিসাধারণ সব শব্দ দিয়ে গাঁথা এই মালা কেন বাঙালির কণ্ঠে মণিহার হলো? কারণ এতে ধ্বনিত হয়েছে বাঙালির মনের কথা। শহীদ আলতাফ মাহমুদ সুর দিয়ে এই শব্দগুলোকে করে তুলেছেন এমন এক গান, যা বাঙালির জন্য যে কোনো সংকটে, সংগ্রামে উত্তরণের অভয়বাণী হয়ে উঠেছে। তাই পরবর্তী সময়ে আর কিছু না লিখলেও গাফ্্ফার চৌধুরীকে ভুলে যাওয়া বাঙালির পক্ষে অসম্ভব।