করোনায় বিধ্বস্ত আর্থসামাজিক পরিবেশ পরিস্থিতি থেকে পুনরুদ্ধারের, কিয়েভ ক্রেমলিন যুদ্ধের অভিঘাত মোকাবিলার এই সংকটকালে আগামী ৯ জুনে জাতীয় সংসদে উপস্থাপিতব্য বাজেটের কাছে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে মুখিয়ে। সবাই নতুন বাজেট ঘোষণার সময় সরব হয় বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে। এটা যেন সদাশয় সরকারের কাছ থেকে দয়াদাক্ষিণ্য, সুবিবেচনা প্রাপ্তির ব্যাপার। কিন্তু ‘প্রত্যাশিত’ বরাদ্দ ঘোষিত হওয়ার পর তার ‘প্রাপ্তির’ খতিয়ানে, প্রাপ্তিতে ফারাকের কারণ জানতে, দূরত্ব কমানোর কী উপায় তা নিয়ে বছরব্যাপী নিশ্চুপ, নিরুপায় অবস্থায় থাকাটা আরও দুঃখজনক। একটি গণপ্রজাতন্ত্রী সমাজে আমজনতার ন্যায্য বরাদ্দ পাওয়া বা তার ব্যবহারের বা জবাবদিহির অধিকারটি পদ্ধতি প্রক্রিয়ার ঘেরাটোপে, তাচ্ছিল্যের পরিস্থিতিতে উপনীত হওয়াটা আরও দুঃখজনক।
সেসব ঔপনিবেশিক সময়ের মতো ‘জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা গঠিত, জনগণের’ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সদয় হয়ে বাজেট বরাদ্দ দিয়েই কৃতার্থ করা সকলকে, জাতীয় সামর্থ্য ও জনস্বার্থকে বিকিয়ে দেওয়ার কলাকৌশলের কাছে সমবণ্টন নিশ্চিত না করে ‘দুর্বলের রক্ষা করো, দুর্জনের হানো’ না হয়ে, সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদ-অনুশাসনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অন্যায় অনিয়ম দুর্নীতিকে সুরক্ষার মহাসুযোগ অবারিত হতে থাকলে, শত সহস্র শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী (সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রারম্ভেই উচ্চারিত উদ্ভাসিত “আমরা বাংলাদেশের জনগণ”-এর দেশে) পরিবেশ পরিস্থিতিতে তা ‘নিজেরে অপমান’ বলে প্রতীয়মান হতে থাকবে। বাজেট প্রস্তাবনা, পাস ও বাস্তবায়ন পরিস্থিতির সুরতহাল পর্যালোচনায় গেলে দেখা যাবে ক্রমশ অনেক উন্নয়ন উন্নতি, সমূহ সংস্কার, সাফল্য, অগ্রগতির পাশাপাশি অনেক মৌলিক অধিকার অর্জন এখনো বাকির খাতায়, তার তালিকাও বেশ বড়। চেষ্টা চলছে, চেষ্টা অব্যাহত থাকুক, তবে করোনা বিপর্যয় মোকাবিলার এ পর্যায়ে চলতি বাজেটবর্ষের বরাদ্দ বাস্তবায়নের নির্মোহ মূল্যায়ন অতীব গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, এই অভিজ্ঞতার আলোকে আগামীর কলাকৌশল কর্মকৌশল আঁকতে হবে, থামাতে হবে, রশি টানতে হবে।
প্রত্যাশা এই যে, আগামীর পরপর কয়েকটি বাজেট হতে হবে মানুষকে কাজ দেওয়ার এবং কাজে রাখার বাজেট। বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের এই পর্বে গুরুত্বহীন ও অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমিয়ে উৎপাদনশীল, সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসৃজন প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়াবার কোনো বিকল্প নেই। কোনো সুযোগ রাখা সমীচীন হবে না বাস্তবায়ন না করে বরাদ্দকৃত অর্থ ও সুযোগ বেহাত অব্যাহত রাখা। সরকারি খাতের বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ করতেই সহায়কনীতি ও বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা উঠে আসতে হবে। যাতে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন বিনিয়োগে।