শব্দদূষণের বিষয়টি পরিবেশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। শব্দ সহনীয় মাত্রায় থাকলে সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে। আর শব্দ অসহনীয় মাত্রার হয়ে গেলে সেটা পরিবেশকে দূষিত, অতিষ্ঠ এবং মানুষ ও প্রাণীর অবস্থানের অর্থাৎ বসবাসের অনুপযুক্ত করে তুলবে। শব্দদূষণ বিষয়টির সাথে মানুষের স্বাস্থ্যেরও ঘনিষ্ঠ সংশ্লেষ রয়েছে।
বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণে এই বছরের জানুয়ারি মাসেও বায়ুদূষণে ঢাকা বিশ্বের এক নম্বর স্থানে ছিল। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) শব্দদূষণ নিয়ে সম্প্রতি (মার্চ, ২০২২) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের ৬১টি জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ শহরের মধ্যে শব্দদূষণ সবচেয়ে বেশি হয় ঢাকায়। অর্থাৎ শব্দদূষণেও ঢাকা শীর্ষে। এই খবর নতুন করে কম-বেশি সবার মাঝেই উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
উদ্বেগের বড় কারণ, শব্দ এখন দূষণের পর্যায়ে চলে গেছে। অর্থাৎ দূষণের সংজ্ঞা অনুসারে শব্দ এখন পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে। শব্দদূষণের কারণে মানুষের অকালমৃত্যু ঘটছে। শব্দদূষণের কারণে হৃদরোগীর তালিকায় নতুন করে অনেক নাম যুক্ত হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশের মতো এ বিষয়গুলো আমাদের দেশেও ঘটছে বলেই আমি অনুমান করি। ফলে আমার ধারণা, এ বিষয়গুলো নিয়ে যদি নির্ভরযোগ্য গবেষণা পরিচালনা করা যায় তাহলে এর প্রকৃত একটি চিত্র উঠে আসবে এবং যা বের করে আনাটা এখন খুবই জরুরি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) ১৯৯৯ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী, মানুষের জন্য ঘরের ভেতরে শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৫৫ ডেসিবল। ঘরের বাইরে বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবল। অবশ্য ২০১৮ সালের হালনাগাদ নির্দেশিকায় সড়কে শব্দের তীব্রতা ৫৩ ডেসিবলের মধ্যে সীমিত রাখার সুপারিশ করা হয়। বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালাতেও একই মাত্রাকে সহনীয় বা সর্বোচ্চ মাত্রা হিসেবে ধরা হয়েছে। অথচ ঢাকার এ মাত্রা ১১৯ ডেসিবল ও রাজশাহীতে ১০৩ ডেসিবল।