দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পায়রা সেতুর টোল নির্ধারণের পর সেটা নিয়ে মানুষের অসন্তোষ ছিল। ফেরির তুলনায় পাঁচ থেকে সাত গুণ টোল নির্ধারণ করাকে মেনে নেয়নি যাত্রীরা। কিছু যানবাহনের জন্য এই সেতুর নির্ধারিত টোল এরকম—বড় বাস ৩৪০, মিনিবাস-কোস্টার ১৯০, মাইক্রোবাস ১৫০, ফোর হুইলচালিত যানবাহন ১৫০, সেডান কার ৯৫, মোটরসাইকেল ২০ টাকা। এই গাড়িগুলো বেছে নেওয়ার কারণ এগুলোর মধ্য থেকেই হবে বরযাত্রীর গাড়ি। এই সেতু দিয়ে একটি বড় বরযাত্রী পার হলে তাতে সম্ভাব্য নানা ধরনের কটি গাড়ি থাকতে পারে, তাতে টোল কত হতে পারে, সে হিসাব কষা যায় সহজেই।
বাংলাদেশের নিতান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারেও বিয়ের বাজেট কত, আমরা তা জানি। সেই আলোকেই সরকার দলীয় একজন সাংসদ কাজী কানিজ সুলতানা হেলেনের ছেলের বিয়ের বাজেট সহজেই অনুমেয়। কিন্তু তাঁর ছেলে বিয়ের পর কনেসহ বরযাত্রী নিয়ে বাসায় ফেরার পথে পায়রা সেতুর টোল দিতে চাননি, এমনকি জড়িয়েছেন মারামারিতে।
সেতুর টোল না দিয়ে যে কয়টি টাকা বাঁচাতে পারতেন সাংসদের পরিবার, সেটা তাঁদের আছে একেবারেই নস্যি। কিন্তু দেশের আর সব মানুষকে যখন টোল দিয়ে সেতু পার হতে হয়, সেখানে সাংসদের সন্তানের বিয়ের বরযাত্রীকে টোল দিতে হয় না, এটা সবার সামনে তাঁর দাপট প্রমাণ করে। বিশেষ করে, যখন ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে ফিরে যাচ্ছে, তখন নববধূকে দেখানোটা জরুরি, তিনি কাকে বিয়ে করেছেন। ক্ষমতা বলে কথা। হ্যাঁ, টাকা বাঁচানো নয়, দাপট প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এর মুখ্য উদ্দেশ্য। ক্ষমতার প্রমাণ রাখতে তাই দাপট দেখানো এতটাই জরুরি যে টোল ফাঁকি দেওয়ার জন্য কেউ মারামারি করে কেউবা আবার বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়ে বসে।