সত্যজিৎ রায়ের চারুলতা ঠিক রবীন্দ্রনাথের নষ্টনীড় নয়। ইতিহাসের সময়টা সত্যজিৎ বদলেছেন ঠিকই কিন্তু লিবারল বা উদারনৈতিক, রাজনীতি ও সমাজ গড়ার নায়করা যে হেরে যায় বার বার এ সত্যটা একই রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথের নষ্টনীড়েও ভূপতি হেরে গেছে। সত্যজিতের চারুলতায়ও ভূপতি হেরে যায়।
তার মানে রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে উদারতা হেরে যায় বার বার। অথচ এই উদার সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যে ভূপতির মধ্যে একটা দ্রোহ ছিল। আসলে মানুষের দ্রোহটাই যে তার সব থেকে বড় বিষয় সেটিই সত্যজিৎ এর ছায়াছবিতে বার বার মূল বিষয় হয়ে উঠেছে। তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপধ্যায়ের পথের পাঁচালির সবটুকু নেননি। কিন্তু হরিহরের একটা দ্রোহকে নিয়েছেন। তার শিক্ষার একটা দ্রোহ ছিলৈ, যা পরে তার ট্রিলজিজুড়েই আছে। ছোট্ট অপুর ভেতরও একটা বিদ্রোহ আছে। ষাটের দশকের কলকাতা মহানগরকে নিয়ে তার ট্রিলজিরও মূল সুর ওই সময়ের তরুণদের ভেতরের ক্ষোভ। এমনকি সমাজের একজন নারীও মহানগর ছায়া ছবিতে এসে তার ক্ষোভটাকেই বড় সম্পদ মনে করছেন।
তার ওপর ভরসা করেই সে আগামীতে এগিয়ে যেতে চাচ্ছে। ঠিক তেমনি সত্যজিৎ যখন রবীন্দ্রনাথকে যেমন ভেঙেছেন, তেমনি ইবসেনকে ভেঙেও তার মতো করে চলচ্চিত্র করছেন সেখানেও কলকাতা মহানগরের বা ওই সময়ের দ্রোহ বা ক্ষোভ কাজ করেছে।