বাবা হাজি সেলিমের কথা বলার আগে ছেলে ইরফান সেলিমের কথা বলা যাক। প্রকাণ্ড গাড়ি নিয়ে ঢাকা শহরে দাপিয়ে বেড়ানো ইরফান সেলিম তাঁর গাড়ির সঙ্গে সমস্যায় পড়া অন্য কোনো গাড়ি বা মোটরসাইকেলের চালককে চড়থাপ্পড় মেরে বেড়ান আকছার। কিন্তু ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর তাঁর ভাগ্য ততটা সুপ্রসন্ন ছিল না।
রাস্তায় ‘সংসদ সদস্য’ লেখা স্টিকার লাগানো ইরফান সেলিমকে বহনকারী প্রকাণ্ড গাড়ির সঙ্গে সমস্যা হওয়ায় এক বাইকচালককে তিনি এবং তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজন মিলে পিটিয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে সেই বাইক–আরোহী ছিলেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা। আর তাঁর ফেসবুক লাইভ তাৎক্ষণিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের মতো সাধারণ কাউকে এভাবে চড়থাপ্পড় মারায় কিছু আসে–যায় না, কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ‘অসাধারণ’ মানুষের ওপরে চড়াও হয়ে কিছুটা বিপদে পড়েন ইরফান, জেলে যেতে হয় তাঁকে।
মামলা হয় ইরফানের বিরুদ্ধে। তার পরদিনই তাঁর বাসায় র্যাবের অভিযান পরিচালিত হয় বিখ্যাত প্রশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে। দেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২২–কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি আমলাদের ইচ্ছায় প্রশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত চলছে আজও এবং ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম তাতে কিছু নামও কামিয়েছেন।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চকবাজারের দেবীদাস লেনের চান সরদার ভবনে অভিযান চালানো হয়। সেখানে ইরফানের ব্যক্তিগত কর্মচারী জাহিদুলের দেহ তল্লাশি করে একটি কালো রঙের পিস্তল, ৪০৬ পিস ইয়াবা বড়ি এবং দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়। এরপর ইরফান সেলিমের শয়নকক্ষে তল্লাশি চালিয়ে একটি বিদেশি অবৈধ পিস্তল, ম্যাগাজিন ও বিয়ার উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ভবনের অন্যান্য অংশ থেকে এয়ারগান, ছোরা, চাইনিজ কুড়াল, বিদেশি মদ, ওয়াকিটকি সেট, হ্যান্ডকাফ ও ক্যামেরাযুক্ত একটি ড্রোন উদ্ধার করা হয়। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নির্দেশে এসব জব্দ করা হয়।
দেশে ঘটনার ঘনঘটা চলে। একটার পর একটা চাঞ্চল্যকর ঘটনা আসে আমাদের সামনে আর আমরা ভুলে যাই আগেরটিকে। তাই আমরা অনেকেই হয়তো খোঁজখবর রাখিনি ইরফান সেলিমের বাসায় ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার শেষ পরিণতি কী দাঁড়িয়েছে। সেই প্রসঙ্গে ফিরে আসব ইরফানের বাবার আলাপটা সেরে এসে।