মানুষের মন কখন, কী কারণে, কোন কথার পরিপ্রেক্ষিতে খারাপ হয়; তার জন্য অনেকটাই উদ্ভূত পরিস্থিতি দায়ী। কেউ ইচ্ছে করে মন খারাপ বা মনোমালিন্য হোক, চায় না। তবে তা মানবজীবনে অহরহ ঘটতে থাকে। কখনো আর্থিক, কখনো ঠুনকো আক্রোশ, কখনো বা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে অহেতুক টানাহেঁচড়া আমাদের সম্পর্ক একটি বিরাট অন্ধকার খাদে ফেলে দেয়। কিছু মানুষ অনুমাননির্ভর সিদ্ধান্তে নিজে ও অন্যকে প্রভাবিত করে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে চরম ভুল বোঝাবুঝির কারণে। ব্যক্তি যদি লোভে কাতর হয়ে অন্যের ওপর হামলে পড়ে, এতে কার কতটা দোষ বিচারবিশ্লেষণ করতে হবে। একতরফা শুধু একজনকে দোষী ভাবলে অন্যায় করা হবে তাঁর প্রতি। আমাদের বুঝতে হবে, চোখের দেখা বা ঠাট্টার ছলে বলা কথাগুলো কতটা সত্যি বা বাস্তবে কার্যকর।
মানুষের নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা বা নিজের ক্ষুদ্র জীবন উপভোগ করার বদলে অন্যের জীবন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে সময় নষ্ট করার প্রবণতা খুব বেশি। এসব করার মধ্য দিয়ে নিজেরই ক্ষতি, এমনকি একটি সুন্দর গোছানো পরিবারও ধ্বংস হয়ে যায়, দিশাহীন হয়ে পড়ে। পরিবার কাকে রেখে কার পক্ষ নেবে, ভেবে দিশাহারা হয়। তার ফলস্বরূপ কেউ কারও মুখ পর্যন্ত দেখে না, বিপদ–আপদে কেউ কারও পাশে দাঁড়ায় না। তাহলে ক্ষতি কার হলো? নিশ্চয়ই ভুক্তভোগী পরিবার–পরিজনের। বাইরের লোক তখন মজা মারে, লে হালুয়া! অশান্তি জমে ক্ষীর! কিছু বদ মানুষের কাজ হলো বাইরে থেকে হুল ফুটানো।
পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কিংবা মনীষীদের বাণীতে তা আরও স্পষ্ট ফুটে ওঠে। পবিত্র কোরআনে আছে, ‘হে মুমিনগণ, অধিক অনুমান থেকে বেঁচে থাকো। নিশ্চয়ই কোনো কোনো অনুমান গোনাহ। তোমরা কারও গোপন ত্রুটির অনুসন্ধানে লেগে পড়ো না এবং একে অন্যের গিবত করো না।...তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত-১২)। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে লোক কোনো মুসলিমের দোষত্রুটি লুকিয়ে রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষত্রুটি লুকিয়ে রাখবেন।’ (সহিহ মুসলিম)। তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোনো লোক অনুমতি ছাড়া তোমার দিকে উঁকি দেয়, আর তুমি তার দিকে কঙ্কর ছুড়ে মারো।’ (সহিহ বুখারি)।
কারও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে নাক গলানো শিষ্টাচারবহির্ভূত। কেন আপনি অন্যের ফেসবুকে ঢুঁ মারবেন? কেন চ্যাট চেক করবেন? কেন অন্যের মোবাইল চুপিসারে কৌশলে নিয়ে তার ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট দেখবেন? কে দিয়েছে আপনাকে এই অনুমতি? এ তো গর্হিত কাজ। এখন এসবই চলছে সমাজে হামেশা। ঠুনকো কথার জেরে খুনখারাবি ঘটছে চোখের সামনে। মানসিক ডিপ্রেশনে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে মানুষ। এসব হচ্ছে শুধুই পারিবারিক কলহ, সন্দেহ আর মানমর্যাদা না পাওয়ার অনুশোচনায়।