গত দুটি ঈদ উদ্যাপন হয়েছে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশে। করোনা নামক ভয়াবহ মরণব্যাধির কারণে মানুষের জীবনে নেমে এসেছিল এক ধরনের অনিশ্চয়তা। এবার আমাদের দেশে করোনা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। ফলে ঈদ উদ্যাপনের আয়োজনে এবার তোড়জোড় ব্যাপক। বিপুলসংখ্যক মানুষ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য ঢাকা ছেড়েছেন। আবার ঢাকায় এসেছেনও কেউ কেউ। লাখ লাখ মানুষের আসা-যাওয়ার কারণে যাত্রাপথ যতটা কষ্টকর হবে বলে মনে করা হয়েছিল, বাস্তবে তা হয়নি। ব্যাপক যানজট সেভাবে হয়নি। মানুষের ক্রমক্ষমতা যে বেড়েছে, তা বাজারে-দোকানে-শপিংমলের কেনাকাটার বহর দেখেই বোঝা যায়। তাহলে কি সব মানুষ সমান আনন্দে ঈদ উদ্যাপন করছেন? না, তা অবশ্যই নয়। অভাবী মানুষও দেশে অনেক আছেন। দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়েও কারও কারও জীবনে ঈদ এসেছে। দেশে সম্পদ বেড়েছে। অভাব একেবারে দূর হয়নি। তবে ‘হররোজ রোজা’ রাখার মতো লোক কমলেও দেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন লোকের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি।
আমাদের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পাকিস্তানে। আমরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছি পাকিস্তানে। আর এটাও আমাদের সবার জানা যে, পাকিস্তান রাষ্ট্রটি ছিল সাম্প্রদায়িক। দ্বিজাতি তত্ত্ব ছিল পাকিস্তানের ভিত্তি। হিন্দুর জন্য আলাদা রাষ্ট্র, মুসলমানের জন্য আলাদা রাষ্ট্র—এই চরম সাম্প্রদায়িক ব্যবস্থাটি তখনকার রাজনীতির কারবারিরা মেনে নিয়েছিলেন। ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ তাড়ানোর আন্দোলন পরিণতি পেয়েছিল দেশ ভাগের মধ্য দিয়ে। ভাবা হয়েছিল, এভাবে ধর্মভিত্তিক দুটি রাষ্ট্রের উদ্ভব হলে শান্তি আসবে, স্বস্তি আসবে, আসবে দুই ধর্মবিশ্বাসী মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি। হিন্দুর জন্য ভারত, মুসলমানের জন্য পাকিস্তান। দেশ ভাগের পর দেখা গেল চিত্র ভিন্ন হয়েছে। পাকিস্তানে কিছু হিন্দু থাকল, ভারতে মুসলমান। দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে, রক্ত, অশ্রু, বেদনা-বিচ্ছেদের সকরুণ অসংখ্য কাহিনি তৈরি করেও ভারতকে মুসলমানমুক্ত করা যায়নি, পাকিস্তানকেও হিন্দুমুক্ত। সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশ ভাগ হলো এবং দুই দেশের রাজনীতিতেই সাম্প্রদায়িকতা স্থায়ীভাবে জায়গা পেয়ে গেল। যদিও ভারত রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে ধর্ম নয়, ধর্মনিরপেক্ষতাকে গ্রহণ করল আর পাকিস্তান থাকল ধর্ম নিয়েই। ধর্ম মানে ইসলাম ধর্ম।