কফিল উদ্দীন ও আছির উদ্দীন দুই ভাই। গত বছর তিস্তার ভাঙনে তাঁদের বাড়ি-ঘর-সম্পত্তি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পরপরই কফিল উদ্দীনের দুই ছেলে স্ত্রীদের নিয়ে ঢাকা চলে গেছেন বেঁচে থাকার তাগিদে। পাঁচ-সাত বছরের একটি সন্তানকে তাঁরা দাদা-দাদির কাছে রেখে গেছেন। যাওয়ার পর আর আসেননি। থুতনিতে হাত দিয়ে বিষণ্ন মুখে তিস্তার পাড়ে বসে ছিলেন ষাটোর্ধ্ব কফিল উদ্দীন। তিনি হাত উঁচু করে নদীর দিকে তর্জনী তুলে বলছিলেন, ‘ওই যে জায়গাটা, ওখানেই হামার পাকা ঘর আছলো। জমিগুলা সোগ নদীত। এলা মাইনষের বাড়িত থাকি। বাড়ি-জমি, টাকা কিছুই নাই, কিসের ঈদ!’ কথাগুলো বলার সময় চোখ ছলছল করছিল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের পানি আড়াল করার জন্য মাথাটা নদীর দিকে ঘুরিয়ে নেন।
পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন আছির উদ্দীন আর তাঁর স্ত্রী। তাঁর স্ত্রীর কোলে বছর দুয়েকের একটি সন্তান। আছির উদ্দীনের স্ত্রীর কাছে জানা গেল, গত বছর নদীতে সব বিলীন হওয়ার পর তাঁদের মেয়ে তিন সন্তানকে রেখে ঢাকা গেছেন কাজের খোঁজে। মেয়ের স্বামী পালিয়েছেন অনেক দিন আগেই। ঢাকায় তাঁর মেয়ে কাজ করে ১১ হাজার ৪০০ টাকা জমিয়েছিলেন। মোবাইল অ্যাকাউন্টে সেই টাকা ছিল। সেই টাকা কে তুলে নিয়েছে জানেন না। আছির উদ্দীন বললেন, ‘মেয়েটা ফোন দিয়া খালি কান্দে। টাকার অভাবে আইসপার পারিল না।’ আছির উদ্দীন স্ত্রী ও মেয়ের তিন সন্তানকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রিত।