বাংলাদেশের অর্থনীতি, অগ্রগতি, সম্ভাবনা সবকিছু দাঁড়িয়ে আছে ইংরেজি 'R' আদ্যক্ষরের তিনটি শব্দের ওপর—Rice, Remittance, RMG. সোজা বাংলায় কৃষকের উৎপাদিত ধান, প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স আর তৈরি পোশাক রপ্তানি—এই তিন হলো বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ।
এই তিনটিই শ্রমঘন কাজ। সরলভাবে বললে, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে মেধা, প্রতিভা, দক্ষতার অবদান সামান্যই। বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে আসলে শ্রমিকের ঘামে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলা শ্রমে। আসলে বাংলাদেশে সবচেয়ে সহজলভ্য হলো মানুষ, তাই সবচেয়ে সস্তা হলো শ্রম। কিন্তু যে শ্রমিকেরা আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে, দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে সেই শ্রমিকেরাই বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত।
কৃষকের কথাই ধরুন, সারাবছর অবর্ণনীয় পরিশ্রমে তারা ফসল ফলায়, আমাদের আহার জোগায়। কিন্তু তাদের কোনো ভয়েস নেই, কোনো সংগঠন নেই, গণমাধ্যমে তারা উপেক্ষিত, রাজনীতিবিদদের কাছে তারা অবহেলিত। সেচের পানি না পেয়ে কৃষকদের আত্মহত্যা করতে হয়।
মূলধারার গণমাধ্যমের সংবাদে ঠাঁই পেতে তাদের মরতে হয়, নয় তাদের বাঁধ ভাঙতে হয়, নয় বন্যায় ভেসে যেতে হয়, নয় নদী ভাঙতে হয়। তারা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না। সরকারের নানা সাহায্য তাদের ঘর পর্যন্ত পৌঁছায় না। একেবারে ভেসে যাওয়ার আগে আমরা তাদের নিয়ে একটু আহা-উহু করি বটে, কিন্তু তাতে তাদের কোনো লাভ হয় না।
প্রত্যেকবার ভরা মৌসুমে ধান, পাট, আলু, পেঁয়াজ, সবজির দাম এতটা কমে যায়; কৃষকের খরচের টাকায় ওঠে না, শ্রমের দাম তো অনেক পরে। আমি প্রতিবার ভয় পাই, এইবার কৃষক যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো, আগামীবার হয়তো এই কৃষক আর ফসলই ফলাতে পারবে না। কিন্তু আমাদের অদম্য কৃষকদের কখনো ধ্বংস করা যায় না।
মূলধারার গণমাধ্যমের সংবাদে কৃষকদের ঠাঁই পেতে তাদের মরতে হয়, নয় তাদের বাঁধ ভাঙতে হয়, নয় বন্যায় ভেসে যেতে হয়, নয় নদী ভাঙতে হয়। তারা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-বন্যায় সবকিছু ভেসে গেলেও তারা মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন। সরকারি সাহায্যের আশায় থাকেন না তারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মানিয়ে নিয়ে টিকে থাকার এক অনন্য শক্তি আছে তাদের। সেই শক্তির বলেই তারা ধ্বংস হতে হতে আবার উঠে দাঁড়ান। আবার ফসল ফলান এই ব-দ্বীপের উর্বর মাটিতে।