গত ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর ভাষায়, ‘শুধু আইন করে সবকিছু করা যাবে না। এ জন্য মানসিকতা বদলাতে হবে। চিন্তাচেতনায় পরিবর্তন আসতে হবে।’
শুধু আইন দিয়ে সবকিছু করা যায় না সত্য। তবে আইনের শাসনটা জরুরি। কেননা, আইনের শাসন না থাকলে আইন নারীকে যে অধিকার দিয়েছে, তা–ও ভোগ করতে পারবেন না।
স্বাধীনতার ৫১ বছরেও কি নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এসেছে? এর সরল উত্তর আসেনি। এখনো নারীদের একটা বড় অংশ, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় যতই তাঁরা এগিয়ে থাকুন না কেন, তাদের ‘গৃহবন্দী’ থাকতে বাধ্য করা হয়। কখনো পরিবারের চাপ, কখনো সমাজের চাপ, কখনো সংসারের বোঝা তাঁদের গৃহবন্দী করে ফেলে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র এটাকেই স্বাভাবিক মনে করছে।
গত বুধবার প্রকাশিত ইউনেসকোর ‘গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং-২০২২’ প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা আমাদের কেবল উদ্বিগ্ন নয়, আতঙ্কিত করে। বিশ্বের ৮৪টি দেশের নাগরিকদের ওপর ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চালানো জরিপে দেখা যায়, নারীদের কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি চরম বৈরী। জরিপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক ৮৭ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, নারীরা চাকরি করলে সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাই তাঁদের চাকরি করা ঠিক নয়। অর্থাৎ পুরুষেরা বাইরে চাকরি করে আয় করবেন, আর নারীরা বাসায় সন্তানের লালন–পালন ও পরিবারের অন্য কাজগুলোয় নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখবেন।
এর অর্থ নারীকে গৃহবন্দী করে রাখা। যদিও ভার্জিনিয়া উলফ লিখেছেন, ‘নারীর নিজস্ব কোনো ঘর নেই।’ আমাদের সমাজেও মেয়েরা শৈশবে বাবার ঘরে থাকেন, বিয়ে হলে স্বামীর ঘরে চলে যান। তাঁর নিজের ঘর কোথায়?’
এই জরিপের সঙ্গে সম্প্রতি প্রকাশিত আরেকটি জরিপের তথ্য-উপাত্ত মিলিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এক বেসরকারি সংস্থার গবেষণার শিরোনাম হয়েছে, ৭৪ শতাংশ মানুষ ভাবেন সমাজের জন্য মন্দ মেয়েরা মন্দ ছেলেদের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক! (প্রথম আলো, ১ এপ্রিল ২০২২) আর মন্দ মেয়ে হচ্ছেন তাঁরা, যাঁরা নাইট শিফট করেন, গণমাধ্যমে কাজ করেন, পুরুষের সঙ্গে কাজ করেন। যে দেশে পুরুষেরা ঘরের বাইরে নারী কাজ করবেন, সেটাকে ভালো মনে করেন না, তাঁরা কী করে নাইট শিফটে পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করাকে সুনজরে দেখবেন?