মুহিত ভাইকে গণফোরাম থেকে মূলত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিয়ে আসেন শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক, সংবাদ সম্পাদক, মরহুম বজুলর রহমান। সে সময়ে এ নিয়ে বজলু ভাইয়ের সঙ্গে মুহিত ভাইয়ের বেশ কয়েকটি দীর্ঘ আলোচনা হয়। তার কয়েকটি আলোচনায় দুজনেরই প্রিয়পাত্র হওয়ায় আমার থাকার সুযোগ হয়েছিলো। তখন বুঝেছিলাম মুহিত ভাই আসলে গণফোরামে যোগ দিয়েছিলেন, যতটা না কামাল হোসেনের সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণে তার থেকে বেশি তাঁর ঘনিষ্ট বন্ধু জিয়াউল হক টুলু’র কারণে। টুলু ভাইয়ের বাসা ছিল মুহিত ভাইয়ের নিজস্ব বাসার মতো। টুলু ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কও তার ঠিক তেমনি। তাই অনেকটা টুলু ভাইয়ের অনুরোধ তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি। তবে, তিনি বলতেন, কামাল হোসেন, মাহবুবে আলম ( সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল) এরা শিক্ষিত মানুষ তবে এদের দিয়ে রাজনীতি হবে না। তাছাড়া তাদের সঙ্গে ড. ইউনূসের একটা যোগ থাকায় সেটাকেও একটু ভিন্নভাবে দেখতেন। সত্যি অর্থে ড. ইউনূসের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন ছিল মুহিত ভাইয়ের। তবে তার অর্থনীতির জ্ঞানকে তিনি স্বীকার করতেন। সম্মানও করতেন। যে কারণে তিনি মন্ত্রী হওয়ার পরে ড. ইউনূসের যখন গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থাকার বয়স চলে যায়, তিনি কিন্তু তাকে গ্রামীণ ব্যাংকে রাখতে চেয়েছিলেন।
ড. ইউনূসের এই গ্রামীণ ব্যাংকে থাকার প্রশ্নে মুহিত ভাই আমাকে বলেছিলেন, দেখ, ব্যাংকটা তার ব্রেইন চাইল্ড শুধু নয়, এর সঙ্গে তার নাম জড়িত। তাই ব্যাংকটার কল্যাণের স্বার্থে তাকে রাখা উচিত। আর এ কারণে, তিনি ড. ইউনূসকে তাঁর অফিসে একটা লাঞ্চে আমন্ত্রণ জানান, এবং সেখানে তিনি তাকে ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান, উপদেষ্ট বা আরও সম্মানজনক কোনও পদে থাকার জন্যে অনুরোধ করেন। সেদিন রাতেই মুহিত ভাইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ড. ইউনূসের মত কী? তিনি বলেছিলেন, আমার তো মনে হলো তিনি রাজি। এখন তার তো কিছু পরামর্শদাতা আছে, তারা তাকে নষ্ট না করলে হয়। ওই ব্যাংকে তার দরকার।
কেন দরকার বলতে তিনি বলেছিলেন, দেখ বাংলাদেশে অর্থনীতি বোঝে দুটো লোকে। তারপরে তিনি ওই দুই ব্যক্তি সম্পর্কে একটা মন্তব্য করেছিলেন। সেটা আমি এখানে লিখবো না। এরপরে তিনি লোক দুজনের নাম বলেছিলেন, একজন ড. ইউনূস ও একজন ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ী। এর পরে তিনি তাঁর স্বভাব সুলভ হাসি দিয়ে বলেন, কিন্তু এই দুজনের অর্থনীতির বুদ্ধি দেশের মানুষের কোনও কাজে লাগে না। ইউনূস তার বুদ্ধি দিয়ে সারা পৃথিবী থেকে খ্যাতি কেনেন। আরেকজন নিজের অর্থ বাড়ান। দেশের কোনও কল্যাণে আসে না।
মুহিত ভাই অর্থমন্ত্রী থাকা অবস্থায় একটা বিশেষ দিক হয়তো অনেকের নজর এড়িয়ে গেছে বা হয়তো সেটা ইতিহাসের স্রোতের নিচে দিয়ে প্রবাহিত একটা বিষয়। সৎ ও শিক্ষিত সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে যে কোনও সৎ লোকের পক্ষে তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়া খুব সহজ ছিল। দিন হোক, রাত হোক তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করতেন। শুধু তাদের কাজের কথা শুনতেন না, তাদের কাছ থেকে দেশের কথা শুনতেন। আবার তার দশ বছরে আজকের অনেক ডাকসাইটে ব্যবসায়ী যারা নানান জায়গায় ছড়ি ঘুরাচ্ছে, তাদেরকে তিনি কখনই সাক্ষাৎ দেননি। তাঁর বক্তব্য ছিল ওরা ক্রক, ওরা দেশটাকে শেষ করে দেবে।
তাকে এ বিষয়ে বলেছিলাম, আপনি একা তাদের দেখা না দিয়ে পারবেন। তাদের তো রাজনীতির নানান জায়গায় সম্পর্ক। তাদেরকে আপনি ঠেকাবেন কীভাবে? তিনি হেসে বলতেন, আমারটুকু তো অন্তত আমি করি। এ কথা বলার পরে তাঁর মুখে একটা কালো ছায়া দেখতাম। আসলে তার ওই মুখ দেখে বুঝতাম রাজনীতিকে ব্যবহার করে এই লাভের বিষয়গুলো তিনি পছন্দ করতেন না। তারপরেও তাঁকে করতে হতো।