এবার বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ, ইফতার ও মাহে রমজান এবং ঈদুল ফিতরে বিগত দুই বছরের মতো বাহ্যত বাদ সাধতে পারেনি মাইক্রোসকোপিক ভাইরাস কভিড-১৯। করোনাকালে বিশ্বব্যাপী করোনার কমবেশি বিস্তার ও অবস্থানের কারণে প্রায় প্রতিটি অর্থনীতিতে ব্যাপক দুর্যোগ, দুরবস্থা ও দুর্ভোগ নেমে এসেছিল। তার ধকল কাটিয়ে ওঠার এই সময়ে এবারের ঈদুল ফিতরে উৎসবের অর্থনীতিতে নানান পরোক্ষ প্রভাব পরিলক্ষিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, বিশেষ করে জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে করোনার অভিঘাতটি ব্যাপক, কেননা এ দেশের সিংহভাগ মানুষ নিম্ন ও মধ্যবিত্তের বলয়ে। এখানে উচ্চবিত্তের সঙ্গে মধ্য ও নিম্নবিত্তের আনুভূমিক ও উলম্ব সম্পর্কের দূরত্ব সাধারণ সমীকরণ ও সূচকের ধারেকাছে নয়। নয় বলেই এখানে ইনফরমাল সেক্টরে সিংহভাগ মানুষকে নানান উৎসব, কর্মযোগ উপলক্ষে আয় উপার্জনের জন্য মুখিয়ে থাকতে হয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নানান উৎসব আয়োজন পালন উপলক্ষে জেগে ওঠে। উৎসব উপলক্ষেই আয় ব্যয় বণ্টন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বৈষম্য দূরীকরণের, সম্পদ ভাগাভাগির এবং মধ্য ও নিম্নবিত্তের জীবিকা নির্বাহের একটা সুযোগ বা উপায় উপস্থিত হয়। সে নিরিখে বিগত বাইশ মাসে করোনার সঙ্গে সংগ্রামে বাংলাদেশের অর্থনীতি জেগে ওঠার মতো ডজনখানেক উৎসব আয়োজন পালন হাতছাড়া হয়েছে। এবারের পহেলা বৈশাখ, মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতর হাতছাড়া হতে দেওয়ার অবকাশ না থাকলেও এবার সবকিছু অনেকটা ঠিক হওয়ার যে আশায় মানুষ বুক বেঁধেছিল আর এই উৎসব আয়োজনের জন্য বেশ কিছু বাড়তি বিনিয়োগেও নেমেছিল সবই সফল বিনিয়োগে পরিণত হবে এটা দৃশ্যমান হচ্ছে না। কিয়েভ-ক্রেমলিন যুদ্ধের প্রভাব বিশ^ পণ্যবাজারে যেভাবে গেড়ে বসার আভাস দিচ্ছে তাতে ঘর পোড়া গরুর সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাওয়ার মতো পর্যায়েই আঘাতের ওপর আঘাত হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এর ফলে স্বাস্থ্যবিধি পালন উপেক্ষার একটা পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, কিন্তু এটা অবলম্বন করা এখনো অতীব প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞ মহল থেকে বলা হচ্ছে। এভাবেই করোনার আপাতত থেমে থাকাকালে খাবি খাচ্ছে এবারের উৎসবের অর্থনীতি।