জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর বিরুদ্ধে ঐচ্ছিক তহবিল নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ওই তহবিল থেকে অসহায় মানুষের নামে দুই থেকে দশ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও সেই টাকা উত্তোলন করে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন।
এমনকি নিজের ব্যক্তিগত সহকারীর (পিও) নামেও বেশ কয়েকবার টাকা উত্তোলন করেছেন। সেই টাকার বিষয়ে জানেন না তার ব্যক্তিগত সহকারীও। এছাড়া বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে দরিদ্রদের জন্য সরকারিভাবে দেওয়া পানির ট্যাংক বিতরণেও অনিয়ম করেছেন তিনি। দেড় হাজার টাকার বিনিময়ে এসব ট্যাংক দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতিটি ট্যাংক বাবদ নেওয়া হয়েছে পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা। ডা. রুস্তম আলী ফরাজী নিজের শশুরবাড়িতে দিয়েছেন তিন থেকে চারটি পানির ট্যাংক।
২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ পর্যন্ত পিরোজপুর-৩, মঠবাড়িয়া আসনের সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর ঐচ্ছিক তহবিলে বরাদ্দ হওয়া টাকা বণ্টনের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিজের আত্মীয়-স্বজন, তুলনামূলক সচ্ছল, নিজের প্রতিষ্ঠিত কলেজের শিক্ষক, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব টাকা তিনি নিজেই আত্মসাৎ করেছেন। অনেকে জানেনই না, তাদের নামে ঐচ্ছিক তহবিল থেকে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাসান নামের এক ব্যক্তির নামে কয়েক দফা ঐচ্ছিক তহবিলের টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। হাসানের বাবার নাম বাবুল মিয়া। ঠিকানা সূর্যমনি, টিকিকাটা। ঠিকানার সূত্র ধরে খোঁজ পাওয়া যায় হাসানের। জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী হিসাবে। তার নামেই ঐচ্ছিক তহবিলের টাকা তোলা হয়েছে বেশ কয়েকবার।
এ বিষয়ে হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি এমপি মহোদয়ের ব্যক্তিগত সহকারী হিসাবে চার-পাঁচ বছর কাজ করছি। কিন্তু ঐচ্ছিক তহবিলের টাকা নেইনি কখনো। তিনি বলেন, আমি কেবল সংসদ সদস্যের কথামতো স্বাক্ষর করেছি। তিনি ঐচ্ছিক তহবিলের সব টাকা বাসায় এনে যাকে মন চায় দিতেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন কাজ করলেও আমাকে বেতন দেওয়া হয়নি। বেতনের টাকা তুলে এমপি মহোদয়ের স্ত্রীর হাতে দিতে হতো। চলাফেরার জন্য আমাকে মাত্র চার হাজার টাকা দেওয়া হতো।
হাসান ছাড়া আরও অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের, যাদের নামে ঐচ্ছিক তহবিলের টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জনই বলেছেন তারা কোনো টাকা পাননি। এমনকি অনেকে জানেনই না তাদের নামে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে এসব সাধারণ মানুষ নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।