সর্বোচ্চ সাজা হতে পারত ১০ বছরের কারাবাস অথবা জরিমানা। কিন্তু মামলা লড়তে লড়তে কেটে গিয়েছে ৩৪ বছর। তাই দোষ প্রমাণ হলেও মালদহের গৌর মণ্ডল, সুবোধ চন্দ্র রায়-সহ পাঁচ জন অভিযুক্তের সাজা কমালেন বিচারপতি। তাঁদের মামলায় সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের রায়, এত দিন ধরে মামলা লড়ার কষ্ট এবং মানসিক উৎপীড়ন সইতে হয়েছে। তাই নতুন করে কোনও সাজা দেওয়া হল না। এর আগে যে ক’দিন তাঁরা জেলবন্দি ছিলেন সেটাই সাজা হিসেবে গণ্য করা হবে।
মালদহের ইংরেজবাজার এলাকার বাসিন্দা রঘুনাথ মণ্ডল তাঁর আমবাগান খগেন মণ্ডলের কাছে বন্ধক রেখেছিলেন। ১৯৮৮ সালের মার্চ মাসে তিনি সেই বাগান ছাড়াতে যান। সে সময় তাঁর সঙ্গে খগেনের বচসা হয় এবং খগেনের লোকেরা রঘুনাথকে আটকে রেখে মারধর করা হয়। রঘুনাথকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। তার জেরে তিনি মারা যান। সেই ঘটনায় গৌর মণ্ডল, সুবোধচন্দ্র রায়, সুকেশ মণ্ডল, সুনীল রায় এবং ফেকান মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই ঘটনায় নিম্ন আদালতে ১৩ জন সাক্ষী এবং বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪(১) ধারায় ওই পাঁচ জনের পাঁচ বছরের কারাবাস এবং পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা হয়। তার বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে কলকাতা হাই কোর্টে আর্জি জানান ওই পাঁচ জন। সেই সূত্রে জামিনেও মুক্তি পান।
কলকাতা হাই কোর্টে আবেদনকারীদের তরফে এই মামলায় আদালতবান্ধব হিসাবে নিযুক্ত আইনজীবী সুরুচি সাহা সাক্ষীদের নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি জানান, সাক্ষীরা কেউ নিরপেক্ষ নন, বরং নিহতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু কোর্টের পর্যবেক্ষণ, নিহতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় সাক্ষীরা চাইবেন আসল দোষী শাস্তি পান কিন্তু তা বলে কোনও নির্দোষ ব্যক্তির ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইবেন না। শুধু তাই নয়, এই মামলায় বিচারপতির আরও পর্যবেক্ষণ, পুলিশ যা যা সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করেছে তাতে অভিযুক্তদের দোষ যথাযথ ভাবেই প্রমাণ হয়। তাই অভিযুক্তেরা মামলা থেকে খালাস পাওয়ার যে আর্জি পেশ করেছিলেন তা-ও বাতিল করে হাই কোর্ট। এর পরেই বিচারপতি জানান, মামলার আবেদনকারীদের বয়স এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কথা মাথায় রেখে সাজা কমানো হল। এ ক্ষেত্রে বিচারের জন্য দীর্ঘ মানসিক উৎকণ্ঠার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন বিচারপতি।