গরম এ বছর মাত্রা ছাড়াচ্ছে। ১৫ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরিসংখ্যান বলছে, দীর্ঘ আট বছর পর তাপমাত্রার পারদ ৪১ ডিগ্রি ছাড়াল। এর আগে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলেও ওই পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডল এপ্রিল ও মে—এই দুই মাস উত্তপ্ত থাকে। শীতের পর সূর্যের উত্তরায়ণ ঘটে। অর্থাৎ সূর্য কিরণ লম্বভাবে এ অঞ্চলে পড়ে। এ সময় বাংলাদেশের উপর দিয়ে দক্ষিণ দিক থেকে যে সামান্য জলীয়বাষ্প আসে তা তাপমাত্রা কমিয়ে রাখে। কিন্তু এবার সেই দখিনা বাতাস খুবই কম এসেছে। ফলে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক কম। তাই তাপমাত্রা বেড়েছে। আগামী কয়েকদিন তাপপ্রবাহ থাকতে পারে এই অঞ্চলে। বৃষ্টি হলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, গত ১০০ বছরে দেশের গড় তাপমাত্রা প্রায় ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ২০২১ সালের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের ৯টি জেলার তাপমাত্রা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশিদিন প্রচণ্ড গরম থাকে যশোরে। এ জেলায় বছরে গড়ে ৭৫ দিন আবহাওয়া বেশি উষ্ণ ছিল, যা রাজশাহী (৬৭ দিন) ও ঈশ্বরদীর (৫৮ দিন) চেয়ে বেশি। গবেষণায় আরও উঠে আসে যে, ঢাকায় বছরে ৩৬ দিন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি গরম ছিল।
বাংলাদেশে মহানগরের অপরিকল্পিত নগরায়ণ জেলা ও উপজেলা শহর এবং গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে ভূমির ব্যবহার করতে হবে, যেখানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য জলাভূমি, বনাঞ্চল টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা থাকবে।
উল্লেখ্য, যশোরে বেশিদিন প্রচণ্ড গরম থাকার কারণ হিসেবে ভৈরব ও মুক্তেশ্বরী নদীর মৃতপ্রায় দশা ও সুন্দরবনের বিস্তৃতি কমে যাওয়াকে দায়ী করা হয়। সুন্দরবন একসময় যশোরের একটি অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
বিশ্বজুড়েই তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর উপায় খুঁজতে এখনো পিছিয়ে রয়েছে বিশ্ব। গবেষকদের বিশ্লেষণ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে ২০৩৭ সাল নাগাদ বৈশ্বিক উষ্ণতা এখনকার তুলনায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। আর ২০৫১ সাল নাগাদ তা আরও ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।