আজকের পত্রিকার জন্য লিখতে বসার আগে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি লেখা পড়ে সদরঘাটের প্রতি আমার সেই পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে, অর্থাৎ আমার শৈশবের প্রান্তে এসে অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল। ঢাকা তখন আমার কাছে একটা বিস্ময়। সুদূর গ্রামে থাকা একটি শিশুর কাছে বিস্ময়টাই স্বাভাবিক। আমাদের কাছের বড় শহর টাঙ্গাইল, সে-ও ভীষণ অনুন্নত। এমনি অনুন্নত যে ঢাকা-টাঙ্গাইল রাস্তাটাও তখন হয়নি। ঢাকায় আসতে হতো বাসে, ময়মনসিংহ হয়ে লোকাল ট্রেন ধরে সন্ধ্যায় এসে পৌঁছাতে হতো ঢাকায়। ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টার একটি ভ্রমণ। কিন্তু এই ভ্রমণেও ক্লান্তি নেই, কারণ ঢাকায় এসে গেছি।
ঢাকায় এসে উঠেছিলাম খালার বাড়িতে। খালার বাসা ছিল ক্যান্টনমেন্ট। খালু সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত চাকুরে। কিন্তু তখনো তিনি একটি সরকারি অফিসে কাজ করেন। সুঠাম দেহ এবং সাইকেল চালানোয় পারদর্শী। তিনি সাইকেলের সামনে বসিয়ে আমাকে সদরঘাটে নিয়ে আসেন। সদরঘাটের জনারণ্য তখন অনেকটা সুশৃঙ্খল। বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চ, নৌকার বহর। আমার সেই প্রবীণ আত্মীয় নিরলস সাইকেলচালক। বাকল্যান্ড বাঁধের পাশ দিয়ে বাবুবাজার, ইসলামপুর ঘুরে সাইকেলে বসে থেকে ক্লান্ত হলে নেমে কিছু দূর হেঁটে যেতাম। চোখে আমার দুরন্ত কৌতূহল এবং সেই সঙ্গে শরীরে অদ্ভুত এক প্রাণচাঞ্চল্য। প্রথম দিন ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে একটা আত্মতৃপ্তি যে ঢাকা দেখে ফেলেছি।