বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর আছে। প্রথমত অবিভক্ত পাকিস্তানের ২৩ বছরে বাঙালি, অর্থাৎ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পালাক্রমিক নির্যাতন ও উৎপীড়নের অধ্যায়। এই নিপীড়ন চলে ধর্মের নামে, অন্যদিকে পাকিস্তানি রাষ্ট্রের তথাকথিত অখণ্ডতার নামে। কিন্তু বাঙালির প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর থেমে থাকে না। ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তানকে সচেতন করে; উত্তরোত্তর বিক্ষুব্ধও করে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং ঊনসত্তরের গণআন্দোলন, একই সঙ্গে ছাত্রসমাজের ১১ দফার পথ ধরে জাতি পৌঁছে যায় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে।
ব্রিটিশ ভারতের বিভক্তি ঘটে উগ্র সাম্প্রদায়িক 'দ্বি-জাতিতত্ত্ব' বা হিন্দু-মুসলমান দুই জাতিতত্ত্বের আলোকে। গঠিত হয় ভারত ও পাকিস্তান নামে দুই স্বাধীন রাষ্ট্র। পাকিস্তান গঠিত হয় পূর্ববঙ্গ ও হাজার মাইল দূরের পশ্চিম খণ্ড নিয়ে, যার সঙ্গে একমাত্র ধর্ম ছাড়া পূর্ববঙ্গের মানুষের কোনোই সাদৃশ্য ছিল না। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি গোড়া থেকেই ছিল স্বৈরতান্ত্রিক ও পরিপূর্ণভাবে অগণতান্ত্রিক। বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানি শাসকরা রাষ্ট্রের 'দ্বিতীয় শ্রেণি'র নাগরিকে পরিণিত করে। নানা পথপরিক্রমায় আসে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, যা ছিল সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রথম নির্বাচন। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুলভাবে বিজয়ী হয়।