এ কথা প্রায় সবাই বলে থাকেন, আমাদের দেশে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে অথচ শিক্ষার মান বাড়ছে না। তাহলে শিক্ষকরা কী করেন? তারা শুধু কি শেখান নাকি শিখতে উদ্বুদ্ধ করেন? শিক্ষক হচ্ছেন তিনি যিনি শিখা দিয়ে শিখা জ্বালানোর কাজ করেন, শুধু তোতা পাখির মতো মুখস্থ করা নয় প্রশ্নের খোঁচা দিয়ে জাগিয়ে তোলেন মনটাকে আর স্বপ্নের বীজ বপন করে ভবিষ্যতের ফলের সম্ভাবনা তৈরি করেন। তিনি অতীতের অভিজ্ঞতার সার সংকলনের সঙ্গে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংযোগ সাধন করিয়ে তাকে প্রস্তুত করেন ভবিষ্যতের জন্য। কিন্তু সেই শিক্ষক যদি পেটের দায়ে চাকরি করেন, জীবনের ভয়ে সংকুচিত থাকেন বা সম্মান হারানোর ভয়ে ম্রিয়মাণ থাকেন তাহলে পাঠ্যপুস্তক পড়া পুথিগত বিদ্যালাভে সহায়তা করতে পারবেন কিন্তু জ্ঞান ও মর্যাদাসম্পন্ন প্রজন্ম তৈরি করতে পারবেন না।
শিক্ষার উদ্দেশ্য কী? তথ্য এবং জ্ঞানের পার্থক্য কী? যা যাচাই করা যাবে না তা নিয়ে তর্ক করা কি যাবে? দীর্ঘদিন ধরে যা জেনে এসেছি তার সঙ্গে নতুন জ্ঞানের বিরোধ হলে করণীয় কী? নতুন কিছু হলেই কি তা গ্রহণ করতে হবে নাকি পরীক্ষায় প্রমাণিত হলে গ্রহণ করা যাবে? পরিবর্তনশীল প্রকৃতিজগৎকে জানার উপায় কি বিজ্ঞান না অতীত থেকে পাওয়া বিশ্বাস? এমনি অনেক প্রশ্নের উত্তর মানুষ পাবে কীভাবে এবং কোথা থেকে? অতীতের ইতিহাস বলে প্রশ্ন করা কঠিন এবং তার চেয়েও কঠিন উত্তর খোঁজার কাজ। মিথ্যা কথা বলার দায়ে কাউকে খুব বেশি শাস্তি পেতে হয়েছে কি না তা আমাদের জানা নেই। যদি মিথ্যা বলার শাস্তি থাকত তাহলে কি মানুষ এত নির্বিবাদে এবং অবলীলায় মিথ্যা বলতে পারত? কিন্তু সত্য খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে এবং সত্য প্রচারের দায়ে কত বড় বড় মানুষকেও যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তাদের জীবন কেড়ে নেওয়া হয়েছে তা ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা আছে। কিন্তু তার পরও সত্যের সন্ধানে মানুষ ছোটে, কখনো নিজের জীবন বিপন্ন করেও। আর কখনো কখনো নিরীহ সত্যকে শক্তিশালী মিথ্যা দিয়ে পরাজিত করা হয়, অপমানিত করা হয় তার নজির অসংখ্য।