সেদিন আমাদের বাসার পোষা কুকুর সেফো হারিয়ে গিয়েছিল। সেফোকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা হয়েছিল প্রায় ৯/১০ মাস আগে। সে এতটাই কুচকুচে কালো আর মিষ্টি চেহারার যে ওর প্রতি বাসার সবার খুব মায়া তৈরি হয়ে গেল। সে বাড়িঘর তছনছ করে, দুষ্টুমি করে। আমাদের মেজাজ খারাপ হলেও ওর প্রতি মায়া আর ভালবাসা বাড়তে থাকে। বাইরে গিয়ে রাস্তার কুকুরের তাড়া খেয়ে হঠাৎ হাতে ধরা দড়ি খুলে দে ছুট। ছুট দিয়ে কই যে চলে গেল, কে জানে।
এরপর দুই রাত একদিন পর ও ফিরে এল পথ চিনে। কিন্তু যে দুইদিন ও ছিল না আমরা এলাকার ও আশেপাশের সব রাস্তায় খুঁজেছি পাগলের মতো। লোক লাগিয়েছি, পোস্টার ছাপিয়েছি, পুরস্কার দিতে চেয়েছি। সেফোকে শুধু কুকুর মনে করলে হয়তো এমনটা করতে পারতাম না। ভালবাসার ধন মনে করেছি বলেই ওকে হারিয়ে ব্যাপক কষ্ট হয়েছে সবার। প্রতিবেশি, বন্ধু, পেট লাভার্স মানুষ সবাই খুবই সহমর্মিতা দেখিয়েছে সেফোকে ফিরে পাওয়ার জন্য।
আমরা শুধু ভেবেছি বাচ্চা কুকুরটা গেল কোথায়? ও রাস্তার অন্য কুকুরদের ভয় পায়, ওরা হামলা চালালে কী হবে? নাকি গাড়ি চাপা পড়লো? খাচ্ছে কী? পানি পাবে কোথায় ইত্যাদি। একসময় মনে হয়েছে সেফো যদি হারিয়ে না গিয়ে অসুস্থ হয়ে আমাদের সামনে মারা যেতো, তাও মনে হয় ভাল হতো। অন্তত আমরা জানতাম ও চলে গেছে।
অনেকের মনে হতে পারে কুকুর, তাও আবার দেশি কুকুরের হারানো নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি হচ্ছে। হয়তো বাড়াবাড়ি হয়েছে। কিন্তু রাস্তা থেকে তুলে আনা একটি বাচ্চা কুকুরকে আমরা পরিবারের সদস্যের মতোই ভালবেসে ফেলেছি। তাই হয়তো ওকে ফিরে পাওয়ার আর্জিটা অনেক বেশি ছিল। যারা পশুপাখি ভালবাসেন না, তারা হয়তো এই অনুভূতি বুঝবেন না অথবা আমাদের ভুল বুঝবেন।