অন্ধকার অরণ্যে জ্যোৎস্নাই পথিকের ভরসা। এ গল্প সে রকমই এক বনজ্যোৎস্নার। কিন্তু এটা শেষ পর্যন্ত উমর খালিদের বৃত্তান্ত হয়ে যেতে পারে। এ বয়ানকে একটা প্রেমকাহিনিও বলা যায়। কিন্তু কর্তৃত্ববাদের কালে ভালোবাসার অনুগল্পগুলোও রাজনৈতিক প্রতিবেদনের আদল নিয়ে নেয়। তবে শেষ বিচারে একে উত্তর-আধুনিক এক কারাসাহিত্য হিসেবেও পাঠ করা যায়।
পেগাসাস যেভাবে বনজ্যোৎস্নার ফোনে
রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের ফোনে আড়ি পাততে ‘পেগাসাস’ নামের ভাইরাস ঢুকিয়ে রাখার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল বিশ্ব কিছুদিন আগে। এ নিয়ে সৌদি আরবের পাশাপাশি ভারতে হইচই হয়েছিল বেশ। ইসরায়েলের তৈরি ওই স্পাইওয়্যারের বড় এক শিকার এসব দেশের অনেক মানুষ। কোন দেশে নাগরিকদের ফোনে কারা ভাইরাস ঢোকায়, সেটা এ কালের পাঠকের কাছে ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
ভারতে যাঁদের ফোনে পেগাসাস রোপণ করা হয়, তাঁদের মধ্যে বনজ্যোৎস্না লাহিড়ীও ছিলেন বলে প্রতিবেদন বেরিয়েছে। অথচ তিনি রাজনীতিবিদ নন, তারকা সাংবাদিকও নন। সামান্য এক ফ্রিল্যান্স গবেষক ও শিক্ষক মাত্র। আট বছর হলো পিএইচডি শেষ করেছেন বনজ্যোৎস্না। এখন মাঝে মাঝে কিছু কাগজে কলাম লেখেন। পেগাসাসপন্থীরা এই তরুণীকে যে এত ভয় পায়, তার বড় কারণ হয়তো তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাস।
জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে মুসলমান ও দলিতদের গণপিটুনির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন বনজ্যোৎস্না। স্থানীয় উগ্র ধর্মবাদীদের প্রতিরোধের ওই কাফেলাতেই তাঁর বন্ধুত্ব হয় রাজনৈতিক সংগ্রামী উমর খালিদের সঙ্গে। উমরও জেএনইউতে পিএইচডি করছিলেন। সেই থেকে বনজ্যোৎস্না ও উমর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে লড়াই করা বন্ধু। বনজ্যোৎস্নার ফোন নিয়ে কর্তৃপক্ষের আগ্রহ ও মনোযোগের কারণ হতে পারে দুই ‘আরবান নকশালে’-এর এই বন্ধুত্ব।
কারাপ্রাচীরের দুই দিকে এক বন্ধুত্বের গল্প
উমর খালিদ জেএনইউতে থাকতে ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট ইউনিয়নে যুক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের কাছে তিনি বিশেষ পছন্দের নন। তবে জনসমাজে এই তরুণের অনুরাগী অনেক। ২০১৩ সালে কাশ্মীরি আফজাল গুরুকে নিয়ে জেএনইউতে এক অনুষ্ঠান করে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন উমর খালিদ, কানহাইয়া কুমারসহ আরও অনেক ছাত্রনেতা।
২০১৮ সালে উগ্র ধর্মবাদীরা উমরকে গুলি করে হত্যারও চেষ্টা চালায় এক দফা। সে নিশানা থেকে কাকতালীয়ভাবে বাঁচলেও ২০২০-এ দিল্লি ‘দাঙ্গা’র পর উমরকে আটক করা হয়। ৫৩ জন নিহত হয় ওই দাঙ্গায়। রাষ্ট্রীয় তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ওই দাঙ্গায় উমর উসকানি দিয়েছেন। এমনকি উসকানিতে শামিল করেছেন চীন-পাকিস্তানের মানুষকেও।