পাকিস্তানে ইমরান খানের সরকারের পতন মার্চ মাসের গোড়া থেকেই কেবল সময়ের ব্যাপার ছিল এবং গত শনিবার রাতে তা–ই ঘটেছে। কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন ধরনের ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে শনিবার যখন দেশের পার্লামেন্টের অধিবেশন বসে, সে সময়ই জানা ছিল যে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব পাস হওয়া কেবল সাংবিধানিক পদ্ধতিগত বিষয়। এটা অবশ্যম্ভাবী জেনেই ৩ এপ্রিল ইমরান খান প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে বলেছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। কিন্তু ইমরান খান দাবার চালে সাময়িকভাবে বিরোধীদের পরাস্ত করতে পারলেও তিনি সম্ভবত অনুমান করতে পারেননি যে রাজনীতির এই খেলার একটি দিক হচ্ছে সংবিধানের ব্যাখ্যার প্রশ্ন এবং তা করার এখতিয়ার দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আছে। পার্লামেন্টে ৩ এপ্রিল যেভাবে অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছিল, তাতে সংবিধানের বরখেলাপ ঘটায় আদালতকে এই সংকটে ডেকে আনার ব্যবস্থা তিনি করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তা–ই ঘটেছে।
কয়েক মাস ধরে অর্থনীতির বেহালের প্রতিবাদে নাগরিকদের আন্দোলন এবং বিরোধী দলগুলোর ঐক্য ইমরান খানের সরকারের পতনের পটভূমি সৃষ্টি করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় সেনাবাহিনীর সমর্থন প্রত্যাহার। তা ছাড়া পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে দেশে ও দেশের বাইরে বিরাজমান অস্বস্তিও এতে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে আদালতের সক্রিয় ভূমিকার কারণেই ইমরানকে সরে যেতে হয়েছে—এ সত্যকে অস্বীকারের উপায় নেই। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, আদালতের এই ভূমিকা কি পাকিস্তানের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উদাহরণ নাকি আদালত অন্য কোনো শক্তির হয়ে এই ভূমিকা পালন করলেন!
পাকিস্তানের বিচার বিভাগের ইতিহাস দুই রকমের। ইতিহাসের একটি দিক হচ্ছে নির্বাহী বিভাগের কার্যকলাপের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন এবং তাকে বৈধতা প্রদান। অন্য দিকটি হচ্ছে নির্বাহী বিভাগের সংবিধানবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রতিশ্রুতি ছিল যে দেশটিতে বিচার বিভাগ নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা ভোগ করবে। ১৯৪৯ সালে দেশের গণপরিষদে পাস হওয়া ‘অবজেকটিভ রেজল্যুশন’, যা ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত কার্যত সংবিধানের ভূমিকা পালন করেছে, তাতেই এ কথা বলা হয়েছিল। কয়েক দশক পর, রাজনীতিতে অনেক ধরনের উত্থান-পতন এবং পাকিস্তানের এক নতুন ভৌগোলিক কাঠামো তৈরি হওয়ার পটভূমিকায় ১৯৭৩ সালের সংবিধানেও তা–ই বলা হয়েছিল। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি পালিত হয়নি। বরং দেখা গেছে যে পাকিস্তানের বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের কাজকে বৈধতা দেওয়ার কাজই করেছে। পাকিস্তানের আদালত সরাসরি নির্বাহী বিভাগের পক্ষে যৌক্তিকতা তৈরি করার ঘটনা ঘটিয়েছেন একাধিকবার।