'আশেপাশের পরিচিতরা সবাই বলছিলেন, আমার ছেলে মারা গেছে। অনেকে বলেন, তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। ৪ দফায় ছেলেকে উদ্ধারের জন্য দালালকে প্রায় ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। ৬ মাসেও ছেলের কোনো খোঁজ না পেয়ে নিজেই চলে যাই লিবিয়ায়।'
কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লার শাহিনুর বেগম।
তিনি আরও বলেন, 'আমার একটাই ছেলে। ৬ মাস ধরে ছেলের কোনো খবর না পেয়ে আমি ঠিকমতো খেতে পারিনি, ঘুমাতে পারিনি। শুধু কেঁদেছি আর আল্লাহর কাছে ছেলেকে ভিক্ষা চেয়েছি। গরু-ছাগল, জমিজমা বিক্রি করে, বন্ধক রেখে ছেলের মুক্তির জন্য টাকা পাঠিয়েছে। সব টাকা দালালরা খেয়ে ফেলেছেন।'
টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা হয় শাহিনুরের। কথাগুলো বলার সময় টেলিফোনের ওপার থেকে ভেসে আসে কান্নার শব্দ।
৬ মাস ধরে লিবিয়ায় 'মাফিয়াদের' হাতে বন্দি ছেলেকে উদ্ধার করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন শাহিনুর বেগম।
৪৫ বছর বয়সী শাহিনুরের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায়। প্রাইমারির গণ্ডি না পেরোনো শাহিনুর ২ মেয়ে ও এক ছেলের জননী। তার স্বামী লিবিয়ায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ২ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।
অভাবের সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতে একমাত্র ছেলে ইয়াকুব হাসানকেও (২০) তিনি পাঠান লিবিয়ায়। ছেলেকে লিবিয়া পাঠানোর পর প্রথম ২ বছর ভালোই চলছিল তাদের সংসার। অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে 'মাফিয়াদের' হাতে ধরা পড়েন ইয়াকুব। তারপর থেকেই তাদের সুখের সংসারে বিপর্যয় নেমে আসে।