চৈত্রে চৌচির মাঠ। প্রখর রোদে যেন ঝলসে উঠছে পিচঢালা পথ। আর হঠাৎ বসন্ত বাতাসে প্রাণ পায় প্রাণহীন পত্তর। নির্মল আকাশে মেঘের আনাগোনা, বিদ্যুতের চমকানি শেষে বৃষ্টির খেলা। সব দেখে আচ করা যায়, বৈশাখ সমাগত। বৈশাখ যতই কাছে আসছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা ততই ব্যস্ত হয়ে উঠছেন। নবীণ-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের পদচারণা আর কর্মযোগে মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে চারুকলা প্রাঙ্গন।
বৈশাখকে বরণ করে নিতে প্রতিবছর চারুকলা প্রাঙ্গণ থেকেই বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য বিষয় ‘নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’। অর্থাৎ করোনাকালে যা কিছু আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ছন্দকে ব্যাহত করেছে, যা কিছু আমাদের জীবনকে মলিন করে দিয়েছে, সেগুলো মুছে যাক এবং জীবন নির্মল ও মঙ্গলময় হয়ে উঠুক। মঙ্গল শোভাত্রা বর্ণিল করতে দীর্ঘ দুই বছর পর চারুকলায় চলছে মহাযজ্ঞ। নবীণ-প্রবীণ শিক্ষার্থীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার সকল প্রস্তুতি সঠিক সময়ে সম্পন্ন করতে। তাই চারুকলার ফটকে পা রাখলেই চোখে পড়বে মঙ্গল শোভাযাত্রার কর্মযজ্ঞ।
চারুকলা প্রাঙ্গণজু্ড়ে বৈশাখী উসৎবের সাজসাজ রব। এখানে কেউ জলরঙে ছবি আঁকছেন, কেউ সরায় ফুটিয়ে তুলছেন পৌরাণিক দৃশ্য, আবার কেউ মুখোশ তৈরি করছেন। কেউ কেউ নেমেছেন সাজানোর প্রতিযোগিতায়। দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা এসব শিল্পকর্ম বিক্রির কাজ করছেন কেউ কেউ। শোভাযাত্রাকে বৈচিত্রময় করে তুলতে প্রতিবছরের মতো এবারো থাকছে রাজা-রানীর মুখোশ, বানর, পাখিসহ বিভিন্ন লোকজ অবকাঠামো। বরাবরের মতো বাঙালি সংস্কৃতির সকল অনুসঙ্গই এই উৎসবকে রঙিন করবে। সরাচিত্র, খেলনা, পুতুল, মা ও শিশু, বাঘ, হরিণ, মাছ, মাছের ঝাঁক, মুখোশ, হাত পাখা, শখের হাঁড়ি, বিড়াল, লক্ষীপেঁচাসহ আরও নানা ধরনের শিল্পকর্ম থাকছে। সারা বিশ্বের বাঙালিদের কাছে হাজার বছরের পুরনো গৌরবোজ্জল সংস্কৃতি তুলে ধরার দৃঢ় প্রত্যয়ে প্রতিদিন চারুকলার শিক্ষার্থীরা দিনরাত পরিশ্রম করে চলছেন।