২০০৫ সালের জুলাই মাস। ১৩ কোটি ৭০ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে শুরু করা হয় রাস্তাটির নির্মাণকাজ। কিন্তু মাসের পর মাস; বছরের পর বছর গেল। দীর্ঘ ১৭ বছরেও রাস্তাটির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি! এ সময়ে ধাপে ধাপে ব্যয় করা হয়েছে ১১০ কোটি টাকা। কর্তৃপক্ষ বলছে, রাস্তাটির নির্মাণকাজ শেষ করতে আরও ৭৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা প্রয়োজন। এ টাকা বরাদ্দ পেলেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। তাহলে সবমিলিয়ে ব্যয় হবে ১৮৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
রাস্তাটি হলো বগুড়া শহরের মোহাম্মাদ আলী হাসপাতাল থেকে শহরতলির ছিলিমপুর শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল পর্যন্ত সংযোগ সড়ক। শুধু সময়মতো কাজ শেষ না করায় এ প্রকল্পে সরকারের গচ্চা যাচ্ছে ১৭০ কোটি টাকা।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, মোহাম্মাদ আলী হাসপাতাল থেকে জরুরি ও জটিল রোগে আক্রান্তদের উন্নত চিকিৎসাসেবা দিতে দ্রুত শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে দুই হাসপাতালের মধ্যে সরাসরি একটি রাস্তা নির্মাণে ২০০৪ সালের মার্চে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কারণ এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে যেতে বনানী ফুলতলা কিংবা চারমাথা হয়ে ৭ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েন রোগী ও স্বজনরা। ভোগান্তির অবসানের জন্যই সরাসরি সাড়ে চার কিলোমিটার রাস্তাটি নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।
সড়ক বিভাগ জানায়, সাড়ে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৬০ ফুট প্রস্থ রেখে নকশা অনুমোদনের পর জমি অধিগ্রহণ, মাটি কাটা ও কার্পেটিংসহ ওই সময় সড়কটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। ২০০৫ সালের ২ মে পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর বরাদ্দের টাকা থেকে ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ছাড় দেওয়ায় ওই টাকা দিয়ে রাস্তার জন্য ১ দশমিক ১২ হেক্টর জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। আর নির্মাণকাজের জন্য ঠিকাদারকে দেওয়া হয় এক কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ওই টাকায় ২০০৫ সালের জুলাইয়ে রাস্তার কাজ শুরুর পর নানা জটিলতা ও অর্থের অভাবে মাত্র ৮০০ মিটার কাজ করার পর ২০০৬ সালের জুনে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
হঠাৎ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানা যায়, প্রথম দফায় জমি অধিগ্রহণের পর রাস্তার কাজ শুরু হলে ওই এলাকায় জমির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগায় জমির মালিকরা আর আগের দামে জমি দিতে রাজি না হওয়ায় প্রকল্পটি বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। তখন অধিগ্রহণ করা জমিতে মাত্র ৮০০ মিটার রাস্তা নির্মাণকাজ করা সম্ভব হয়। আরও ১ দশমিক ৬৪ হেক্টর জমি হুকুম দখল করা বাকি থাকে। পরবর্তীতে এ খাতে আর অর্থ বরাদ্দ মেলেনি। এদিকে জমির মূল্য ও নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বাড়তে থাকে এবং রাস্তাটি যেদিক দিয়ে করার জন্য প্রথম পরিকল্পনা করা হয়েছিল ওই রাস্তার দু'ধারে রাতারাতি স্থাপনাও গড়ে ওঠে। এরই এক পর্যায়ে ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর বগুড়ায় এক জনসভায় এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দেন।