শাশ^ত বাঙালি নারীর কথা মনে এলেই মানসপটে যে ছবিটি ভেসে ওঠে, তার পরনে শাড়ি আর কপালে টিপ। একজন নারী শাড়ি পরবেন, না জিন্স পরবেন; টিপ পরবেন, নাকি পরবেন না- সেটি একান্তই তার নিজের সিদ্ধান্ত। এ দেশটি স্বাধীন করতে যে বীর সংগ্রামীরা রক্ত দিয়েছেন, তাদের রক্তের কোনো বিভাজন ছিল না- না লৈঙ্গিক, না ধর্মীয়। পাকিস্তানি শাসকরা যে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসন আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল- এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মিছিলের অন্যতম অংশ ছিলেন প্ল্যাকার্ড হাতে শাড়ি আর টিপ পরা অধিকার সচেতন দ্রোহী নারীরা। আমাদের মা-খালারা শাড়ি-চুড়ি-টিপ পরতেন নিয়মিত, কেউ হয়তো শাড়ি আর চুড়ি পরতেন, টিপ পরতেন না। কেউ শাড়ি আর টিপ পরলেও চুড়ি পরতেন না, কেউ কেউ আবার তিনটিই পরতেন। এ স্বতঃস্ফ‚র্ত সাজেই তারা গার্হস্থ্যজীবন থেকে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন, বিশ^বিদ্যালয়ের ক্লাস বা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার কাজ করেছিলেন। এখানে ধর্মীয় কোনো অনুশাসন যেমন ছিল না, সামাজিক সংকীর্ণতা ছিল না- তেমনি ছিল না কোনো চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি।
আমি কবে থেকে টিপ পরি, এ কথা আজ আর মনে করতে পারি না। টিপ পরলে কে আমার ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে কী ভাবল, সেটি ওই ভাবনাকারীর চিন্তার দীনতা। আমার এতে কিছুই যায় আসে না। কপালে বাহারি রঙের ছোট-বড়-মাঝারি টিপে নিজেকে দেখতে ভালো লাগে। তাই আমি টিপ পরি। কার ভালো লাগল বা লাগল না, কার কোন অনুভ‚তিতে সুড়সুড়ি দিল আমার কপালের টিপ- এ বিবেচনা মোটেও আমার নয়। কারণ আমি মনে করি, যার যার অনুভ‚তি সামলে রাখার দায় তার নিজের।