ছাত্রজীবনে হাইস্কুলে পড়ার সময় আমাদের অনেক রচনা মুখস্থ করতে হয়েছে। গাঁও-গেরামে নিত্য দৃশ্যমান উপকারী প্রাণী গরু থেকে শুরু করে গূঢ় তাৎপর্যপূর্ণ বিমূর্ত বিষয় যেমন সময়নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা, সময়ের মূল্য এই সব ছিল রচনার বিষয়বস্তু। মূর্ত বিষয়গুলো ছিল বর্ণনাধর্মী; তাতে বোঝার কোন ব্যাপার ছিল না। কিন্তু বিমূর্ত বিষয়গুলো তেমন বুঝতাম না, কিন্তু নম্বর তো পেতে হবে। তার একমাত্র উপায় ছিল মুখস্থকরণ ও পরীক্ষার খাতায় তা লিখে আসা। যতদূর মনে পড়ে রচনায় সময়নিষ্ঠা বিষয়টা ছাত্রজীবনের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য বলে জেনেছি; বাকি জীবন অথবা দলগত ও জাতীয় জীবনে এটার গুরুত্ব পড়েছি বলে কিছু মনে পড়ে না। কিন্তু এখন দেখছি যে সর্বক্ষেত্রে এর তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী।
আসলে মানব জীবন তো কিছু মুহূর্তের সমষ্টি; সাধারণত প্রথম দিকের মুহূর্তগুলো ব্যয় হয় শিখতে, আর শেষের দিকেরগুলো করতে, তবে করতে করতেও অনেক শিক্ষালাভ হয়। জ্ঞান, দক্ষতা, পারদর্শিতা, পেশা ও জীবিকার খুঁটিনাটি শিখতে এবং জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে অভ্যাসের বিকাশ ঘটতে প্রথম বেলাটা চলে যায়। এগুলো যে সব বিদ্যালয়ে শিখতে হয়, তা নয়; জীবন থেকে শেখার পাল্লাটাই বেশি ভারী। মধ্যম বেলাটা যায় অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম আর লোভের দাসত্ব করতে। শেষ বেলায় আসে আত্মোপলব্ধি বা পশ্চাৎদর্শন। অর্থনীতির ভাষায় বলা চলে প্রথম বেলাটা ইনপুট, আর দ্বিতীয় বেলাটা আউটপুট। সসীম মানব জীবনের প্রথম মুহূর্তগুলো যেভাবে ব্যয় হয়, পরবর্তী জীবন ও প্রজন্মে তার প্রতিফলন দেখা যায়। এই জন্যই বোধকরি ছাত্রজীবনে সময়নিষ্ঠার অভ্যাস গড়ে তোলার ওপর এত জোর দেওয়া হয়। আর অভ্যাস এমন একটা জিনিস, যেটা একবার গড়ে উঠলে তা জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে বাকি জীবনকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালিত করে।