৪০তম বিসিএসের ফল যেন সমাজ-রাষ্ট্রে বদলে যাওয়া একটি চিত্র বড় করে সামনে আনল। সমাজে সম্মান-মর্যাদার সূচকে বদল এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে কর্মসংস্থানের বাস্তবতার ফারাক দেখিয়ে দিল চোখে আঙুল দিয়ে।
এই বিসিএসে পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশসহ বেশ কয়েকটি ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে আসা শিক্ষার্থীরা। অথচ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী না পাওয়ায় কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারের ২৫৬টি পদে কাউকে সুপারিশ করা সম্ভব হয়নি। এর অর্থ, যাঁরা প্রকৌশলসহ অন্যান্য কারিগরি বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেছেন, তাঁরা সংশ্লিষ্ট পেশায় যেতে চাইছেন না। তাঁদের চাওয়া আমলাতন্ত্রের অংশ হওয়া। অথচ বিশেষায়িত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে অন্যদের তুলনায় তাঁদের পেছনে বেশি ব্যয় করেছে রাষ্ট্র। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব বদলে যাওয়ার এ ঘটনা এক দিনে হয়নি, কয়েক বছর ধরে আস্তে আস্তে হচ্ছে সমাজের মধ্য থেকে। কিন্তু কেন?
বিশেষায়িত পেশা বিশেষ করে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে ভিন্ন ক্যাডারে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে যা জানা গেছে মোটা দাগে তা এমন– বিদ্যমান সামাজিক কাঠামোর জন্য তাঁরা এসব ক্যাডারে যুক্ত হচ্ছেন। সমাজে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের চেয়ে ম্যাজিস্ট্রেট, ডিসি, পুলিশ সুপারদের প্রভাব, সম্মান ও আর্থিক সুবিধা অনেক বেশি। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বিভিন্ন কাজের জন্য তাঁদের শেষমেশ প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারের দ্বারস্থ হতে হয়। অনেক সময় নিজেদের তুলনায় প্রশাসনে কর্মরত নিম্নপদস্থ কর্মকর্তার দ্বারাও ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াররা নানা অবহেলার শিকার হন। একই সঙ্গে চাকরিতে প্রবেশ করে প্রশাসন ক্যাডারের লোকজন হয়ে যাচ্ছেন ইউএনও, ডিসি ও সচিব। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ করতে হয় তাঁদের নির্দেশনায়। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও বৈষম্যমূলক; একজন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কোনো কারণে নিগ্রহের শিকার হলে সাড়াশব্দ নেই, অন্যদিকে পুলিশ-প্রশাসনের কারও দিকে আঙুল তুলতে হলে মানুষ সাতবার ভাবে।
বিশেষায়িত শিক্ষা নিয়েও সাধারণ ক্যাডারে আসার এগুলোই বড় কারণ। কিন্তু এখানে তো প্রতিযোগিতা সবার জন্য উন্মুক্ত। পরীক্ষাপদ্ধতির কারণে সেই প্রতিযোগিতায় বিশেষ সুবিধা পেয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা বা প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা। বিসিএসে প্রার্থীদের মধ্যে বড় ব্যবধানটা তৈরি হয়ে যায় লিখিত পরীক্ষায়। সাধারণ ক্যাডারে ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার মধ্যে ইংরেজি, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা এবং বিজ্ঞানে। চিকিৎসা-প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়গুলোতে অন্যদের তুলনায় বেশি দক্ষ।