খুলনার দাকোপ উপজেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার দক্ষিণে সুতারখালী বাইনপাড়া গ্রাম। ঘূর্ণিঝড় আইলার পর গ্রামটির মানচিত্র বদলে গেছে। নলিয়ান নদীর গর্ভে ভিটেমাটি হারিয়ে অনেকটা ভেতরে এসে মানুষ বসতি গড়েছেন। সেখানকার এবড়োখেবড়ো মাটির রাস্তার ঠিক পাশে রূপা বেগমের ঘর। তপ্ত দুপুরে জগে দড়ি বেঁধে পানি তুলছিলেন তিনি। তবে পুকুর, ট্যাংকি বা সাধারণ কুয়া থেকে নয়; রূপা পানি তুলছিলেন ‘বস্তার কুয়া’ থেকে।
সাত সদস্যের পরিবারের খাওয়ার পানির একমাত্র ভরসা ওই বস্তার কুয়া। রোদ–বৃষ্টিতে প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া বিচিত্র এ সংরক্ষণাগারের পানিকে সুপেয় বলা যায় না। তবু এর ওপর ভরসা করে কয়েকটা মাস ‘নির্ভাবনায়’ কাটে পরিবারটির।
রূপা বেগম বলছিলেন, ‘গরিব মানুষ। ট্যাংকি কেনার টাকা নেই। ঘরে ছোট বাচ্চা আবার আমার কিডনির সমস্যা ধরা পড়ল। বাড়িওয়ালা (গৃহকর্তা) বাইরে কাজে যায়। পানি আনার চরম সমস্যা বাধল। অনেক চিন্তা করে কাঠমিস্ত্রি স্বামী এ পদ্ধতি বের করেছে।’
সেখানে দেখা যায়, সমতল মাটিতে চারটি কাঠের টুকরা পোঁতা। সেগুলো আবার বাঁশের চট দিয়ে গোল করে ঘিরে দেওয়া। চটের গায়ে পরানো হয়েছে জিও বস্তার কাপড়। তার মধ্যে সেলাই করে পলিথিন দেওয়া। টিনের ছোট্ট চাল থেকে কাঠ দিয়ে তৈরি একটা পাইপের মাধ্যমে পলিথিনের ভেতরে বৃষ্টির পানি জমা হয়েছে। সেই পানিও একবারে শেষের পথে। কয়েক দিনের মধ্যে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পানি সংগ্রহের সংগ্রাম শুরু হবে পরিবারটির।