পর্নোগ্রাফির জগতে নেতিবাচকভাবেই নয়া মাত্রা যোগ করেছে বাংলাদেশের পর্নোগ্রাফি। কারণ এখানে যারা দেশীয় পর্নোগ্রাফির দর্শক বা শ্রোতা তারা বিদেশে নির্মিত পর্নোগ্রাফি দেখতে বা শুনতে পছন্দ করেন না। তারা দেশীয় আঙ্গিকে, দেশীয় মেয়ে বা নারী দ্বারা নির্মিত পর্ন দেখতে পছন্দ করছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমনটা ঘটছে? কেন বাংলাদেশের দর্শকরা বিদেশি কনটেন্ট বা আধেয় দেখতে উৎসাহী হচ্ছেন না? কেন তারা দেশীয় ভাবধারায় নির্মিত কুরুচিপূর্ণ এবং নিম্নমানের পর্ন পছন্দ করছেন বেশি? আর কেনইবা বাংলাদেশের পর্ন ম্যুভির কনটেন্ট ঠিক করে দিচ্ছে যে এই সমাজে কে 'ভালো মেয়ে', আর কে 'মন্দ মেয়ে'? এই 'ভালো' বা 'মন্দ' নারীর সাথে সমাজ কী আচরণ করবে সেটাও নির্ধারণ করছে এই সেক্টরটি। অর্থাৎ ডিজিটাল পর্নোগ্রাফির জগৎটি সমাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে একধরনের মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা বিশ্বের আর কোনো দেশের পর্নোগ্রাফির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বিশ্বের বিভিন্নদেশ পর্নোগ্রাফিকে মনে করে শুধুই অ্যাডাল্ট বিনোদন।
এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এখানে যে চরিত্রগুলোকে তারা দেখতে পারছেন, যাদের কথা শুনতে পারছেন, যে কথা বা টার্ম শুনতে পারছেন, সেগুলো সবই তাদের পরিচিত। শুধু এইটুকুতে থামলেও কথা ছিল। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশে একটা বড় অংশ দেশীয় পর্নোগ্রাফি দেখে শুধু অশ্লীলতা আস্বাদনের জন্য নয়। এর চাইতেও বেশি দেখে নারীকে নিন্দা, নির্যাতন ও অপমান করার জন্য। নারীকে নিপীড়ণের উপায় খুঁজে বের করার এবং নারীর পিঠে 'মন্দ মেয়ের তকমা' লাগানোর জন্য।
খুব অদ্ভুত ও ভয়াবহ তথ্যটি উঠে এসেছে 'বাংলাদেশে ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফির সহজ বিস্তার এবং নারীর প্রতি সহিংসতা' শীর্ষক একটি গবেষণা থেকে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) ও বেসরকারি সংস্থা ডি-নেট দেশব্যাপী এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে একদিকে যেমন দেশীয় অনলাইন ও মিডিয়াতে নারীর প্রতি অবমাননাকর, নারীর অশালীন দেহ প্রদর্শন, যৌন আবেদনময় ও পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট বা আধেয় বাড়ছে, অন্যদিকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে কিছু মেয়ে বা নারী ছেলেদের বা পুরুষদের প্রলুব্ধ করে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সচেষ্ট হয়ে উঠছে।
এছাড়া প্রচুর সংখ্যক কিশোর, যুবক ও পরিণত পুরুষ নারীর প্রতি অবমাননাকর কনটেন্ট নিয়মিত দেখে থাকেন বলে গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৮১ ভাগ উত্তরদাতা মনে করেন। দেখা গেছে যেসব পর্নোগ্রাফিক আধেয় দেশীয়ভাবে বা রূপে তৈরি হয়েছে, সমাজে সেগুলোর প্রভাব ও বিস্তার খুব বেশি। গবেষণা প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে যে সমাজে মেয়েদের প্রতি সহিংস ও নির্যাতনমূলক আচরণ বেড়েছে বলে মনে করেন শতকরা ৮২ জন উত্তরদাতা।