রোজায় মূল্যস্ফীতি, বৈষম্য ও স্বাধীনতা

দেশ রূপান্তর আহমেদ জাভেদ প্রকাশিত: ০৩ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৪৯

অ্যাডাম স্মিথের বহুল অলোচিত গ্রন্থ ‘দ্য ওয়েল্থ অব নেশনস’ গ্রন্থটির একশত একাশি নম্বর পৃষ্ঠায় স্মিথ সমাজের প্রকৃত সমৃদ্ধির জন্য নীতিনির্ধারকদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ গুরুত্বের কথা অত্যন্ত জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। স্মিথের ভাষায়: “কোনো সমাজই সুখী ও সমৃদ্ধ হতে পারে না, যদি সে জনগোষ্ঠীর বড় অংশ দারিদ্র্য ও দুরবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করে।” অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেন, “স্মিথের নৈতিক বিশ^াস ছিল, সুযোগের সমতার চেয়েও বড় বিষয় হলো লোকনীতি প্রণয়নে দরিদ্রদের জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া।” নব্য-উদারবাদের এই সময়ে বাংলাদেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের জীবনে কী দুর্বিষহ পরিস্থিতি নেমে এসেছে, প্রতিদিনের খবরের কাগজেই তার ভূরিভূরি প্রমাণ রয়েছে।


এপ্রিল মাসের পহেলা তারিখে প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনাম: “লাঠিতে ভর দিয়ে এলেন টিসিবির পণ্য কিনতে: বয়স তার আশির উপরে।” একই পৃষ্ঠায় অন্য শিরোনামটি হলো “রোজা শুরুর আগে আবার দাম বাড়ল।” দেশ রূপান্তরের শিরোনাম: “চড়া দামে তপ্ত রোজা।” মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুন, লেবু, শসা, পেঁয়াজ, ধনেপাতা, চিনি, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম গড়ে ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। কর্তৃপক্ষের বাজার পর্যবেক্ষণ ও তদারকির দুর্বলতার কারণে এমনটি ঘটতে পারল। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ বাজার তদারকিতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে, সেসব অভিজ্ঞতার বিনিময় এক্ষেত্রে আমরা কাজে লাগাচ্ছি না। আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র শ্রীলঙ্কা (৭.৭ শতাংশ) ছাড়া বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি। এটি শুধু করোনাকালে নয়, এর আগেও এমনটি ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ২.৯ শতাংশ, চীনে ১.৬ শতাংশ, ভারতে ৩.৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ও মালয়েশিয়ায় ৩.৮ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ০.৬ শতাংশ এবং ভিয়েতনামে ৩.৫ শতাংশ। শুধু গড়ের হিসাবই নয়, যাপিত জীবনের নির্দিষ্ট কেইস স্টাডিগুলোও দুর্বিষহ জীবনের বার্তা দেয়।


দৈনিক প্রথম আলোর (১০ মার্চ ২০২২ তারিখের) প্রথম পৃষ্ঠার তিনটি সংবাদের যথাক্রমে প্রথমটি হলো: “ফোঁটা ফোঁটা তেলে পরোটা ভাজা চলে: মাথার ওপর ঝুলছে সয়াবিন তেলের বোতল। স্বচ্ছ চিকন নল বেয়ে তাওয়ায় ফোঁটায় ফোঁটায় তেল পড়ছে। সেই তেলে পরোটা ভাজা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে সয়াবিন তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছেন। যেমনটা সাশ্রয়ী হয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ। তেল বাঁচাতে সম্প্রতি এমন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।” দ্বিতীয়টি হলো: “সঞ্চয় ভুলে ধারে চলছে সংসার: মিরপুর রূপনগরের বস্তিতে ছোট্ট একটি টিনের ঘুপচিঘরে স্বামী ও তিন মেয়ে নিয়ে থাকেন গৃহকর্মী সোনিয়া আক্তার।... বললেন, হঠাৎ করে সব জিনিসেরই দাম বাড়ছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। প্রায়ই তাকে মানুষজনের কাছ থেকে ধারদেনা করতে হয়। ... টিসিবির পণ্য কিনতে পারলে কিছুটা সাশ্রয় হয়। কিন্তু সে জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। মানুষের বাসায় কাজ করেন, তাই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার মতো সময় তার নেই।” এবং তৃতীয়টি হলো: “সকালে লাইনে, বিকেলে খালি হাতে ফেরা টিসিবির ট্রাকের পেছনে ভিড়: সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৪টা টিসিবির ট্রাকের পেছনে এই সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন খ-কালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে সংসার চালানো ইরুন্নেসা। আশা, যদি কম দামে তেল-ডাল কেনা যায়। তবে পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থাকাটাই বৃথা গেছে। ইরুন্নেসার পালা আসার আগেই টিসিবির ট্রাকের পণ্য ফুরিয়ে গেছে।” এই হলো বর্তমান বাস্তব অবস্থা। যাতনার তিক্ত অভিজ্ঞতা যার হয়েছে কেবল সেই ভুক্তভোগীই বোঝেন বর্তমান সময়ে বেঁচে থাকা কতটা কঠিন সংগ্রামের। কিন্তু এই দগদগে বাস্তবতা অর্থনীতিবিদদের ব্যাখ্যায় খুব একটা ফুটে ওঠে না যা একধরনের অ-স্মিথীয় চর্চা। কিন্তু লোকে বিরক্তিকরভাবে তাকে অনবরত স্বার্থপরতার তাত্ত্বিক হিসেবেই দেখতে অভ্যস্ত যদিও তিনি তা ছিলেন না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us