রংপুর সিটি করপোরেশনের ভেতরে অবস্থিত এস আর হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে কর্মরত একমাত্র শিক্ষক নাদিরা বেগম। একমাত্র হওয়ায় তিনিই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক; তিনিই আবার প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস টিচার। কীভাবে একমাত্র শিক্ষক হলেন- জানতে চাইলে নাদিরা বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষকসহ আমরা পাঁচজন শিক্ষক ছিলাম। প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম গত বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর দুই সহকারী শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম ও আবদুর রাজ্জাক খান অবসরে যান। অপর সহকর্মী ফারহানা রুবিনা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন।
মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়টি চললেও সেখানে কাউকে পদায়ন করতে পারেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কারণ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০২০ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি বন্ধ রয়েছে। নাদিরা বেগম জানান, তাদের স্কুলের বিষয়টি মন্ত্রণালয়েও জানানো হয়েছে। শিগগির শিক্ষক দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
একইভাবে রংপুর ক্যাডেট কলেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজিনা মমতাজ জাহান গত বছরের ২১ নভেম্বর অবসরে যান। তার অবসরের পর এ বিদ্যালয়ে কোনো প্রধান শিক্ষক দেওয়া যায়নি। চার মাস প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে বিদ্যালয়টি। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রধান শিক্ষকের প্রশাসনিক কাজগুলো চালিয়ে নিচ্ছেন একজন শিক্ষক। বাকি চারজন শিক্ষক মিলে ৪৮৫ জন ছাত্রছাত্রীকে প্রতিদিন পাঠদান করছেন। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও চান দ্রুত প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি শুরু হোক। সহকারী শিক্ষিকা রওশান আরা বীথি বলেন, পাঠদানে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। বদলি শুরু হলে অন্যত্র থেকে শিক্ষক এনে সমন্বয় করা গেলে সমস্যার সমাধান হবে।
জানা যায়, দেশে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর শিক্ষকদের বদলি বন্ধের আদেশ জারি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। দুই বছরে অন্তত সাড়ে ১১ হাজার শিক্ষক অবসরে বা মারা গেছেন। এসব পদ শূন্য হয়েছে। একটি বিদ্যালয়ে সাধারণত একজন প্রধান শিক্ষক ও পাঁচজন সহকারী শিক্ষক থাকেন। পাঁচ শিক্ষকের কেউ আবার প্রেষণে, ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) কোর্স করতে অথবা প্রশিক্ষণে থাকেন। এতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা আরও দুই থেকে তিনজন কমে যান। সারাদেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই এখন শিক্ষক সংকট রয়েছে।