নতুন অর্থবছর ২০২২-২৩-এর আর বেশি দিন বাকি নেই। বর্তমান অর্থবছরের (২০২১-২২) নবম মাস চলছে। যথারীতি বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের সংগঠন বিভিন্ন ‘চেম্বার’ তাদের সুপারিশ তৈরি করে কাগজে তা প্রকাশ করেছে।
অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ নতুন বাজেট সম্পর্কে কথা বলছেন। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতিও তাদের সুপারিশমালা তৈরি করছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী অন্যান্য অর্থমন্ত্রীর মতোই নানা ধরনের পেশাজীবী ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন অচিরেই। নীতিনির্ধারকরাও বসে থাকবেন না। বসে থাকবে না রাজনৈতিক দলগুলোও। মোট কথা, ‘বাজেট মৌসুম’ শুরু হয়ে গেছে অন্যান্য উৎসব ও অনুষ্ঠানের মতো। আমি যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতির ওপর লিখি, তাই ভাবলাম কিছু একটা বলা দরকার।
প্রশ্ন, কী বলব? সবাই তো দেখছি বলছে বিভিন্ন করের (ট্যাক্সের) কথা। কর কমাতে হবে। কী কী, কোন কোন খাতে কর কমানো দরকার তার ওপর সুপারিশ আসছে। কর ক্ষেত্রে কোথায় কোথায় বৈষম্য আছে, তাও আলোচনায় আসছে। ব্যক্তিগত আয়করের সীমা বাড়াতে হবে। এ সবের পাশাপাশি আলোচনায় আসছে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার, মাথাপিছু আয়, মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রপ্তানির অবস্থা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ডলারের দাম, প্রবাসী আয় ইত্যাদি বিষয়। বস্তুত এ সবই সাধারণ আলোচনায় আসে। আমি এর চেয়ে বেশি আশা করি না। কারণ দীর্ঘদিন ধরে দেখছি বাজেট আলোচনায়, বাজেটের ওপর সুপারিশের ক্ষেত্রে প্রাক-বাজেট আলোচনা এসব বিষয়ই প্রাধান্য পায়।
আমার প্রশ্ন, বাজেট কি শুধুই করের বিষয়, রাজস্ব আদায়ের বিষয়? বাজেট কি শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের বিষয়? এ সবের বাইরে কি বাজেটের অন্য কোনো প্রসঙ্গ নেই। লক্ষ্যমাত্রা, আয়-ব্যয়, খাতওয়ারি রাজস্ব ব্যয়, উন্নয়ন বাজেট ইত্যাদির বাইরে কি বলার কিছু নেই প্রাক-বাজেট আলোচনায়? বাজেট ঘোষিত হওয়ার পর দেখা যায় একই ধরনের আলোচনা-সমালোচনা। উচ্চাভিলাসী বাজেট, অবাস্তব বাজেট, গণবিরোধী বাজেট, গরিব মারার বাজেট, বৈষম্য তৈরির বাজেট, ‘ব্যবসায়ীদের জন্য, ব্যবসায়ীদের দ্বারা এবং ব্যবসায়ীদের’ বাজেট। এসব আলোচনার সঙ্গে আমরা মোটামুটি পরিচিত। বলতে দ্বিধা নেই, এসব আলোচনা আমাকে আর আকর্ষণ করে না।
করে না কারণ দেখতে পাচ্ছি রাজনৈতিক লক্ষ্য ভিন্ন একটা কিছু। বাজেটের রাজনৈতিক ও সামাজিক দিকটিই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা কোত্থেকে আসবে? স্বাভাবিকভাবেই তা আসবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। কারণ তিনিই সরকারপ্রধান। তিনি কী চান, দেশকে কোথায় তিনি নিতে চান, কী ধরনের সমাজ তিনি গঠন করতে চান-এ নির্দেশনা তিনিই দেবেন। বস্তুত তার এ দিকনির্দেশনা মান্য করেই বাজেট তৈরি হবে।