আমরা যখন মানুষের জীবন সম্পর্কে আলোচনা করি, তখন তার বিভিন্ন ধরনের চাহিদা এবং এগুলো পূরণ করার বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করি। এর কারণ, যৌক্তিক চাহিদা পূরণের ওপরই নির্ভর করে মানুষের পরম আরাধ্য শান্তি। এর পেছনে বড় চালিকাশক্তি হলো রাষ্ট্র। তাই মানুষের মৌলিক চাহিদা যদি পূরণ না হয়, তাহলে রাষ্ট্রের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্বই হচ্ছে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। মানুষের নানা ধরনের চাহিদা রয়েছে, যেমন—বেআইনি চাহিদা মাদকাসক্তি। আবার বিলাসদ্রব্যের চাহিদাও মানুষের রয়েছে, যা সর্বজনীন নয়। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকা এবং মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য চাহিদাগুলোকেই মূলত মৌলিক চাহিদা বলে। অনেকের কাছেই মনে হতে পারে, পুরনো জিনিস নতুন করে বলা দরকার। বাস্তবতা হচ্ছে, এই আলোচনা এখনো প্রাসঙ্গিক এবং তা জাতীয় ও বৈশ্বিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই।
বেদনার বিষয় হচ্ছে, আমরা দিন দিন মানুষের মৌলিকত্ব থেকে সরে যাচ্ছি। আমরা নতুন নতুন ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি আবিষ্কার করছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এসবের অনেক কিছুই কাজের বিষয় নয়, সর্বজনীন হয় না। চটকদার বিজ্ঞাপন, বক্তৃতা বা কেস স্টাডি ইত্যাদির মাধ্যমে এসব তুলে ধরা হয়। প্রকৃতপক্ষে এগুলো ব্যাবসায়িক বা বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিতে রূপ নিচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে মৌলিক চাহিদা থেকে মানুষের দৃষ্টি সরে যাচ্ছে।
১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর তালিকা এবং পূরণ করা যেকোনো সরকারের দায়িত্ব বলে ঘোষণা করে। তখন মৌলিক চাহিদার তালিকা খুব বেশি ছিল না। তখন ছিল খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ও পানি। পরে মৌলিক চাহিদা সম্পর্কে ধারণা দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। এখন মৌলিক চাহিদা বলতে আমি মনে করি খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি, নির্মল বাতাস ও জ্বালানিকে বোঝায়। এ কারণে এই মৌলিক চাহিদা নিয়ে নতুন করে বলা, সেটি হচ্ছে এই চাহিদাগুলো আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্র সবার জন্য নিশ্চিত করতে পারছে কি না।