ব্যাংকার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান শুভ (ছদ্মনাম)। ছেলেকে কখনোই অপূর্ণতার স্বাদ গ্রহণ করতে দেয়নি। কিন্তু সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া আদরের ছেলেটি একদিন বন্ধুদের সঙ্গে ২০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়। এক মাস হাজতবাসের পর শুভ আদালত থেকে জামিন পেলেও দুই সপ্তাহের মধ্যে সে আবারও মাদকসহ গ্রেফতার হয়। পুনঃপুনঃ অপরাধ করায় আদালত থেকে জামিনও মিলছে না। একইভাবে গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে মানিক (ছদ্মনাম) মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে আদালত থেকে এক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়। কিন্তু সাজা ভোগ শেষে কিছুদিনের মধ্যে আবারও পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয়েছে। অভিযোগ-এলাকায় আবারও মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। এভাবে এক বছরে একে একে ৪ বার এলাকায় চুরি হলেই সে গ্রেফতার হয়েছে।
শুধু শুভ কিংবা মানিক নয়, অধিকাংশ অপরাধী এভাবে কারাগারে আসা-যাওয়ার মধ্যে আছে। জামিনে মুক্তির পর কিংবা সাজা ভোগের পর পুনরায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে একই ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা বারবার গ্রেফতার হচ্ছে। কারা অধিদপ্তরের ২০১৭ সালের তথ্য মোতাবেক, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে বিচারাধীন বন্দিদের মধ্যে ১০,৫৪৫ জন আগে একবার, ৫০৫৭ জন আগে দুইবার, ২৪৭৯ জন আগে তিনবার, এভাবে পনেরো বারের অধিক সময় পর্যন্ত মোট গ্রেফতার হয়েছে ১৯,৯১২ জন এবং সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মধ্যে ৩,৩৮৪ জন আগে একবার, ১৫৫০ জন আগে দুইবার, ৬৯৭ জন আগে তিনবার এভাবে পনেরো বারের অধিক সময় পর্যন্ত মোট গ্রেফতার হয়েছেন ৬০৬২ জন। উভয় প্রকার বন্দি মিলে মোট ২৫,৯৭৪ জন বন্দি একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছিলেন, যা মোট বন্দির ৩৫.৪৯ শতাংশ।
পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে আর কোনো জরিপ হয়নি। ফলে আমরা জানতেও পারি না বাংলাদেশে অপরাধের পুনরাবৃত্তি ও অপরাধপ্রবণতার (Recidivism) হার বাড়ছে না কমছে। অপরাধবিজ্ঞানে একই ব্যক্তি কর্তৃক ভিন্ন ভিন্ন অপরাধে গ্রেফতার এবং সাজা ভোগের পর আবার একই অপরাধে গ্রেফতারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্য থাকলেও এই অভ্যাসগত অপরাধী (Habitual Offender) এবং অপরাধের পুনরাবৃত্তিকারীরা বারবার কারাগারে আসা-যাওয়ায় কারা ব্যবস্থাপনায় এবং সমাজে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। একটি রাষ্ট্রের যখন এক-তৃতীয়াংশের অধিক অপরাধী বারবার অপরাধে লিপ্ত হয়, তখন এটি একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়।