১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা তদানীন্তন পূর্ব বাংলা/পূর্ব পাকিস্তানকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ হিসেবে শোষণ ও লুণ্ঠনের পাশাপাশি অপরিসীম বঞ্চনা দিয়েছে। সে জন্য ১৯৪৭ সালে যদিও পূর্ব বাংলা অর্থনৈতিকভাবে পাঞ্জাব, সিন্ধু, উত্তর-পশ্চিম সীমান্তপ্রদেশ এবং বেলুচিস্তানের তুলনায় খানিকটা এগিয়ে ছিল কিন্তু ২৪ বছরের ওই নব্য ঔপনিবেশিক পর্বের শেষে এসে পাঞ্জাব ও করাচি অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তানের চেয়ে অনেকখানি সমৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। নিচের তথ্য-উপাত্ত থেকে এই শোষণ, লুণ্ঠন, বঞ্চনা ও পুঁজি পাচারের চিত্রটা কিঞ্চিৎ পাওয়া যাবে:
১. প্রাথমিক পর্যায়ে পাকিস্তানের রপ্তানি আয়ের ৭৫-৭৭ শতাংশই আসত পূর্ব বাংলার রপ্তানি পণ্যগুলো থেকে। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত কোরিয়া যুদ্ধ এবং প্রথম ভিয়েতনাম যুদ্ধের কারণে পূর্ব বাংলার পাট রপ্তানি আয়ে একটা জোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় ওই অনুপাত ৮০-৮৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। অথচ, ওই রপ্তানি আয়ের প্রায় পুরোটাই ১৯৪৭-৪৮ অর্থবছর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার দখলে নিতে শুরু করেছিল। ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন যখন জোরদার হতে শুরু করেছিল, তখন বৈদেশিক রপ্তানি আয়ের একটা ক্রমবর্ধমান অংশ পূর্ব পাকিস্তানে বরাদ্দ করা হলেও ১৯৪৭-৭১—এই ২৪ বছরের শেষে এসেও কখনোই বছরে রপ্তানি আয়ের এক-পঞ্চমাংশও পূর্ব পাকিস্তান নিজেদের ভাগে পায়নি, এই ২৪ বছরের গড় বার্ষিক হিস্যা ছিল মাত্র ১৮ শতাংশ।