‘স্বাধীনতা’ বস্তুটি আসলে কী? এ নিয়ে যুগ যুগ ধরে আছে মানুষের আবেগ, আকাঙ্ক্ষা, লড়াই আর আত্মত্যাগ। আছে অনেক তত্ত্ব, প্রয়োগ ও উপলব্ধি। প্রশ্ন হলো, এটি কি শুধুই একটি ভূখণ্ডের সার্বভৌম সত্তা, নৃপতির ইচ্ছেমতো শাসন করার ক্ষমতা, নাকি জীবনচর্চার অনুষঙ্গ? কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের সাহিত্যের শিক্ষক ও পরে প্রশাসনের ডেপুটি কালেক্টর রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৮২৭-৮৭) পদ্মিনী উপাখ্যান কাহিনি-কাব্যের কয়েকটি পঙ্ক্তি তুলে ধরছি:
স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,
কে বাঁচিতে চায়?
দাসত্বশৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,
কে পরিবে পায়।
কোটিকল্প দাস থাকা নরকের প্রায় হে,
নরকের প্রায়।
দিনেকের স্বাধীনতা স্বর্গ-সুখ তায় হে,
স্বর্গ-সুখ তায়।
সার্থক জীবন আর বাহু-বল তার হে,
বাহু-বল তার।
আত্মনাশে যেই করে দেশের উদ্ধার হে,
দেশের উদ্ধার।
অতএব রণভূমে চল ত্বরা যাই হে,
চল ত্বরা যাই।
দেশহিতে মরে যেই তুল্য তার নাই হে,
তুল্য তার নাই।
এই কবিতার ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে পরাধীনতার গ্লানি, স্বাধীনতার জন্য লড়াই এবং আত্মত্যাগের মহিমা। এসব হুবহু মিলে যায় ১৯৭১ সালে আমাদের অনুভূতির সঙ্গে। ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি আসলে একধরনের অনুভূতি। একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এবং তা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে। আমরা আগেও স্বাধীন ছিলাম। তারপর একে একে তুর্কি, মোগল, পাঠান, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, পাকিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্রের অধীনে থাকতে হয়েছে। দীর্ঘদিন আমাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত হয়েছে দিল্লি, লন্ডন আর করাচি-ইসলামাবাদ থেকে। এখন আমরা স্বাধীন। তবে স্বাধীনতার আকার ও প্রকার নিয়ে তর্কবিতর্ক আছে।
২৬ মার্চ আমাদের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা দিবস। আমরা প্রতীকী অর্থেই দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যাপন করি। আমরা যদি সর্বশেষ স্বাধীনতার পর্বটি নিয়ে কথা বলি, তাহলে বলতে হয়, দেশটি হুট করে স্বাধীন হয়নি। এর একটি বিস্তৃত পটভূমি আছে। তবে চূড়ান্ত সময়টি উপস্থিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে।