স্বাধীনতার পর দেশে শিল্পকারখানা ছিল না বললেই চলে। মাত্র ৩১৩টি কারখানা নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে শিল্প খাতের যাত্রা শুরু হয়। তখনকার হিসাব অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশের শিল্প খাতে প্রায় ২৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। তবু ওই সময় সরকারের নানা উদ্যোগে খাতটি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। প্রতিষ্ঠানের মালিকানা নিয়ে সংকটের পাশাপাশি ঋণের অপর্যাপ্ততা ও দক্ষ জনবলের সংকটও ছিল প্রবল। সরকারি বিভিন্ন পুরোনো দলিল ঘেঁটে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
আশার কথা হলো, সেই দেশটিতে গত পাঁচ দশকে বিশাল এক উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী শ্রেণি গড়ে উঠেছে। দেশীয় বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি বাজারেও পণ্যের তালিকা বড় হয়েছে। এককথায়, গত ৫০ বছরে ব্যাপকভাবে শিল্প খাতের বিকাশ ঘটেছে। শিল্পকারখানার সংখ্যা প্রায় দেড় শ গুণ বেড়েছে। বদৌলতে উৎপাদনমুখী কলকারখানার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ১১০টি। এর মধ্যে বৃহৎ কারখানা প্রায় তিন হাজার। এগুলো হচ্ছে এখন শিল্প খাতের মেরুদণ্ড।
গত ৫০ বছরে শিল্প খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এর অন্যতম উদাহরণ হলো বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। চামড়াজাত পণ্যেও বিশ্ববাজারে বেশ সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছে বাংলাদেশ। পুরোনো ইতিহাসের পথ ধরে পাট ও পাটপণ্যের দিন সোনালি দিন আবার ফিরে আসছে। বর্তমানে পাট উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এ দেশে ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনের দ্বারও খুলে গেছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই এখন ফ্রিজ, এসি, মোবাইল ফোনের মতো অতি প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বানাচ্ছে।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও এ কে খান গ্রুপের পরিচালক আবুল কাসেম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিল্প খাতে আমরা কোথায় ছিলাম, এখন কোথায় আছি তা সাদা চোখে তাকালেই দেখতে পারি। সরকার শিল্পনীতির মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিয়েছে। আবার উদ্যোক্তারাও নিজেদের দক্ষ করে তুলতে পেরেছেন। তাই আমরা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হতে পেরেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উদ্যোক্তাদের এখন বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে কাজ করার সুযোগ দেওয়া উচিত।’