বাসাবাড়ি কিংবা শিল্প খাত, গ্যাসের জন্য গ্রাহকদের হাপিত্যেশ নিত্যদিনের। এখন গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুট, বিপরীতে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে মিলছে ২৩০ কোটি ঘনফুট। প্রতিদিন ঘাটতি থাকছে ১৪০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের অভাব মেটানো হচ্ছে আমদানি করা এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) দিয়ে। এই এলএনজি আনতে সরকারের বছরে গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরই এই খাতে ভর্তুকি লাগবে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আবার দেশীয় ক্ষেত্রগুলোতে প্রতিদিন কমছে উৎপাদন। এক বছরেই দেশের গ্যাসক্ষেত্রে দিনে উৎপাদন কমেছে ৪০ কোটি ঘনফুট। তার পরও গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারের নেই তেমন নজর। এলএনজি আমদানিতেই যেন সব তোড়জোড়।
এদিকে দিন দিন উৎপাদন কমলেও বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা বেড়ে হবে ৪৪০ কোটি ঘনফুট। নতুন গ্যাসক্ষেত্র উৎপাদনে না এলে নিজস্ব উৎপাদন নামবে ১৮০ কোটি ঘনফুটে। ঘাটতি ২৬০ কোটি ঘনফুটের চাহিদা মেটাতে তখন এলএনজি ছাড়া বিকল্প থাকবে না। এই পরিস্থিতিতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর সরকারকে নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে তারা গ্যাসের অপচয় ও চুরি রোধের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখার কথা বলেছেন। তারা বলছেন, দৈনিক ৫ কোটি ঘনফুট উৎপাদন বাড়াতে পারলে ৬ লাখ ৫০ হাজার ডলারের গ্যাস আমদানি ঠেকানো সম্ভব। এতে বছরে দুই হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
তবে সহসা নেই আশাজাগানিয়া খবর। গত ১০ বছরে কয়েকটি নতুন ক্ষেত্র আবিস্কৃত হলেও বলার মতো সাফল্য শুধু ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্রের। বাকি সব ছোট ছোট পকেট গ্যাসক্ষেত্র। বছরে দু-একটি কূপ খুঁড়েই সময় পার করছে একমাত্র রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স। সমুদ্রে অনুসন্ধান কার্যক্রম সাত বছর ঝুলে আছে। সিস্টেম লসের নামে বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছে। এলএনজি আমদানির ধাক্কা সামাল দিতে গ্রাহক পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে গণশুনানি করছে বিইআরসি।