স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ প্রকল্পে সংগৃহীত হয়েছিল সাড়ে তিন লাখ পৃষ্ঠার নথিপত্র। এর মাত্র সাড়ে তিন শতাংশ প্রকাশিত হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধের ১৫ খণ্ড দলিলপত্রে। বাকি সাড়ে ৯৬ শতাংশের বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে ১৯৮৮ সালের বন্যার পানিতে। খোয়া গেছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মতো বিষয়ের মূল্যবান দলিলপত্রও।
টিকে যাওয়া দলিলগুলো রাখা হয়েছে জাতীয় জাদুঘরের লাইব্রেরিতে। সেগুনবাগিচায় পুরো চারটি কক্ষে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না যে দলিলগুলোর, সেগুলো রাখতে জাতীয় জাদুঘরের চারটি আলমারি ও ১০টি ফাইল কেবিনেটের সবটুকু জায়গাও লাগেনি।
স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ নামে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নেওয়া প্রকল্পটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র ও ইতিহাস সংগ্রহের দ্বিতীয় প্রকল্প। প্রথম প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাত্র ছয় মাস পরে ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে গৃহীত প্রথম প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গঠন করা হয় জাতীয় স্বাধীনতার ইতিহাস রচনা পরিষদ। প্রকল্পের দপ্তর ছিল বাংলা একাডেমিতে এবং পদাধিকারবলে একাডেমির সেই সময়কার মহাপরিচালক মযহারুল ইসলাম হয়েছিলেন এর চেয়ারম্যান। তাই প্রকল্পটি গবেষকদের কাছে বাংলা একাডেমির ইতিহাস প্রকল্প নামে পরিচিত।
বাংলা একাডেমির প্রকল্পের কর্মী ছিলেন সুকুমার বিশ্বাস। ২০০২ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, প্রকল্পকে কেন্দ্র করে ৩৪ জন তথ্য সংগ্রাহককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। চারটি বিভাগে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছিল। মহকুমা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল।
সুকুমার বিশ্বাস পরে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ প্রকল্পের দ্বিতীয় উদ্যোগেও। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমির পক্ষে নেওয়া তৃণমূল স্তরে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক তথ্যাদি সংগ্রহ ও প্রকাশ প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন তিনি। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। কয়েকদিন পর ২৩ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয় এবং তৃণমূল পর্যায়ের ইতিহাস সংগ্রহের প্রকল্পটি বাংলা একাডেমি থেকে মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় আতঙ্কিত হয়ে সুকুমার বিশ্বাস দেশত্যাগ করেন।