ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে আসছি, পৃথিবীর তিন ভাগ পানি আর এক ভাগ স্থল। ফলে আমরা যে কেউ ভাবতেই পারি, পৃথিবীতে যখন এতই পানি, তখন সমস্যা কোথায়? সমস্যা হচ্ছে, পৃথিবীতে যত পানি আছে তার ৯৭.৫ শতাংশ সামুদ্রিক পানি। আর বাকিটা অর্থাৎ মাত্র ২.৫ শতাংশ স্বাদু পানি বা মিঠা পানি। এই অতি অল্প পরিমাণ মিঠা পানির মধ্যে সবটুকু আবার তরল অবস্থায় পাওয়া যায় না।
কারণ এর মধ্যে আছে জমাট বাঁধা পানি অর্থাৎ হিমবাহ (৬৮.৭ শতাংশ), পার্মাফ্রস্ট (বরফসহ কিংবা অতি ঠাণ্ডা মাটি, পাথর, বালি, মৃত উদ্ভিদের স্তর ০.৮ শতাংশ) ও বায়ুমণ্ডীয় পানি (০.০০১ শতাংশ)। বাকিটুকু হচ্ছে ভূ-উপরিস্থ (০.৩৯৯ শতাংশ নদী, হ্রদ, পুকুর ইত্যাদি) ও ভূগর্ভস্থ পানি (৩০.১ শতাংশ)। প্রকৃতপক্ষে আমাদের পানের জন্য, স্বাস্থ্য রক্ষা, ফসল উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন প্রক্রিয়াসহ দৈনন্দিন নানা প্রয়োজন মেটানোর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পানির উৎস ভূগর্ভস্থ পানি।
পৃথিবীব্যাপী পান করার জন্য যে পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয় তার প্রায় অর্ধেক আসে ভূগর্ভ থেকে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত মোট মিঠা পানির ৪০ শতাংশ পানির জন্য আমরা ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। ভারসাম্যময় বাস্তুতন্ত্রের জন্যও ভূগর্ভস্থ পানি অপরিহার্য। বিশেষ করে নদী, হ্রদ তথা জলাশয় বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ভূগর্ভস্থ পানির কোনো বিকল্প নেই। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অবস্থা মোকাবেলায় ভূগর্ভস্থ পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। কাজেই ভূগর্ভস্থ পানি মানুষ, অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য এক অতি আবশ্যকীয় প্রাকৃতিক সম্পদ।
ভূগর্ভস্থ পানির অপরিহার্যতার জন্য এ বছর জাতিসংঘ কর্তৃক অনুষ্ঠেয় পানি দিবসের (২২ মার্চ ২০২২) প্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘ভূগর্ভস্থ পানি’। প্রচারের জন্য স্লোগান করা হয়েছে—‘ভূগর্ভস্থ পানি : অদৃশ্য থেকে দৃশ্যমান’। পানিকে ভূগর্ভস্থ থেকে ওপরে না ওঠালে তা দৃশ্যমান হয় না। ওপরে ওঠার পরই পানির গুণাগুণ দৃশ্যমান হয়। এবারের এই দিবসে আমাদের পায়ের নিচের এই অদৃশ্য সম্পদকে সুস্থায়ী করার জন্য এর বিজ্ঞানসম্মত উত্তোলন ও ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০১৫ সালে জাতিসংঘ নির্ধারিত সর্বমোট ১৭টি সুনির্দিষ্ট অভীষ্টের মধ্যে ৬ নম্বর ক্রমিকে ‘সকলের জন্য পানি ও স্যানিটেশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা’র কথা বলা হয়েছিল। সন্দেহ নেই, এ জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।