আমাদের দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে রয়েছে গর্বের ইতিহাস এবং অনেক মানুষের আত্মত্যাগ। আমরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি এবং তা আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের গোড়াপত্তন তৈরি করেছে। ছয় দফা আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, একাত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭ মার্চের ভাষণ, সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে দেশকে শত্রুমুক্ত করা—এর প্রতিটা ঘটনা নিয়েই যেকোনো জাতি গর্ববোধ করতে পারে। দেশ এখন স্বাধীন। বিদেশি বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদকে অবাক করে দিয়ে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশটি অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর হচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থায় যখন উন্নত দেশগুলো দিশেহারা, তখন হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র নির্লজ্জ বিশেষণকে ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ ঘটিয়েছে।
অনেক চ্যালেঞ্জ এখন আমাদের সামনে। শহরভিত্তিক নয় এমন দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনঘনত্ব আমাদের। পৃথিবীর গড় জনঘনত্বের চব্বিশ গুণ বেশি, জনবহুল ভারতের থেকে তিন গুণ এবং সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন থেকে আট গুণ জনঘনত্বের দেশটিতে স্বভাবতই মাথাপিছু প্রাকৃতিক সম্পদ কম। এত কম মাথাপিছু প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে একটি মানবশিশুকে মানবসভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত করার কঠিন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ সফলভাবে মোকাবিলা করছে। এর জন্য বিশ্ববাসীর অভিনন্দন আমরা পেতেই পারি।
আমাদের অগ্রযাত্রায় একমাত্র পাথেয় অতিরিক্ত মানুষ। শিক্ষা দক্ষতা দিয়ে তাদের মানবসম্পদে রূপান্তরের মধ্যেই নিহিত রয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার কোটির কাছাকাছি অথচ পৃথিবীর প্রায় ২৩০টি দেশের মোট জনসংখ্যাও এর থেকে কম। সুতরাং এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য সম্পদের অপ্রতুলতার মধ্যেও প্রয়োজন অনেক বড় বিনিয়োগ। আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে, প্রতিটি সুযোগে উন্নয়নমূলক নয় এমন বিনিয়োগ, ব্যয় পরিহার করতে হবে।
আমাদের জাতীয় দিবস অনেক। এই দিনগুলোতে দেশের উন্নয়নে যাতে নিরলসভাবে কাজ করি, তার শপথ গ্রহণ করতে হবে, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমাদের এই দিবসগুলো অনেকটা লৌকিকতা পালনের মতো করে ফেলছি, নিজেরা দেশগড়ার কাজে উজ্জীবিত হচ্ছি না।