সময় যতই যাচ্ছে, ইউক্রেন সংকট যেন আরও জটিল আকার ধারণ করছে। প্রথমে মনে করা হয়েছিল সহজেই কিয়েভ দখল করবে রাশিয়া; কিন্তু সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা মার দিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনীয় সেনারা। কিয়েভ দখল করতে মস্কোর আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে মনে হয়। বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তেমনই মনে হচ্ছে, রাশিয়ার কিয়েভমুখী অগ্রাভিযান ঠেকাতে যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে ইউক্রেনীয় সেনা। তবে সময় একটু বেশি লাগলেও ইউক্রেনে রাশিয়া পরিকল্পনামাফিকই এগিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া অবশ্য ইউক্রেনে রুশপন্থি সরকার গঠনের প্রাথমিক পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। ইউক্রেনের মেলিটোপোল ও ডিনিপ্রোরুডনের বর্তমান মেয়রকে সরিয়ে দিয়ে রুশপন্থি মেয়রদের বসিয়ে এ প্রক্রিয়াটি শুরু করে দিয়েছে তারা। যদিও সংশ্লিষ্ট শহর দুটোর নাগরিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছে; তাতে রাশিয়ার মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়বে বলে মনে হয় না। বলাই বাহুল্য, কিয়েভ দখল না করা পর্যন্ত রাশিয়া তাদের মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এজন্য তাদের আরও অস্ত্র, অর্থ ও জনবল খোয়াতে হবে।
কিয়েভ শহরের নাগরিকরা ইতোমধ্যে ইউক্রেন সেনাদের সহযোগিতায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের পাশে পেয়ে ইউক্রেন সেনারা দ্বিগুণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে রাজধানী কিয়েভে অগ্রসরমান রুশ সেনাদের ঠেকাতে শেষ চেষ্টা চালাবে সন্দেহ নেই। যদিও রাজধানীর প্রায় অর্ধেক অধিবাসী ইতোমধ্যেই অন্যত্র সরে পড়েছেন। তারপরও এখনো যারা শহরটিতে রয়ে গেছেন, তারা নানাভাবে যতটা সম্ভব সাহায্য করে যাচ্ছে ইউক্রেন সেনাসদস্যদের। রাশিয়ার সেনারা কিয়েভের আশপাশের এলাকা দখল করে নিলেও কিয়েভ দখল করতে পারেনি। রাশিয়ার সেনাবাহিনী যে টাইম এবং স্পেস অর্থাৎ সময় ও ভূমি দখলের হিসাব ধরে কিয়েভ অভিমুখে অভিযান চালিয়ে এসেছে, সে হিসাব অনুযায়ী কিয়েভকে তাদের আয়ত্তে আনতে পারেনি। অপরদিকে রাজধানীর চারপাশে, এমনকি শহরের অভ্যন্তরেও শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে ইউক্রেন সেনারা। এমন পরিস্থিতিতে কিয়েভ দখলে কী পরিমাণ যে রক্তপাত ঘটবে তা এ মুহূর্তে কল্পনা করা যাচ্ছে না।
২৪ ফেব্রুয়ারি অভিযান শুরুর পর রাশিয়া ভেবেছিল ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হয়তো অতি সহজেই ভেঙে পড়বে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। অভিযান শুরুর পর রাশিয়া নিজেও ভাবেনি, ইউক্রেন এভাবে এতদিন ধরে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুললেও রুশ বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তূতে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর। কিয়েভও এ বোমাবর্ষণের বাইরে নয়। দিন দিন তারা যেভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে তা এক প্রকার দৃশ্যমান। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির শত অনুরোধেও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটোভুক্ত গোষ্ঠীর কোনো দেশ সেভাবে এগিয়ে আসেনি, যেভাবে জেলেনস্কি ও তার দেশের জনগণ আশা করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো যুদ্ধে যাবে না তারা। কিছু অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম পাঠিয়ে দিয়ে তারা তাদের সমর্থন জানিয়েছে কেবল। কিয়েভ যখন মস্কো বাহিনীর ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে গেছে, এমন সময় জেলেনস্কি ন্যাটো গোষ্ঠীর কাছে আবারও ইউক্রেনের আকাশ সীমাকে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণার আরজি জানিয়েছেন। ২০ দিন মস্কোকে ঠেকিয়ে রাখলেও পরিস্থিতি ক্রমেই যে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে ইঙ্গিত দিয়ে জেলেনস্কি অনুরোধ করে বলেছেন,‘আমি আবারও বলছি, যদি ইউক্রেনের আকাশপথ বন্ধ না করা হয়, তাহলে ন্যাটো ভূখণ্ডে রুশ মিসাইল আছড়ে পড়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।