বাংলাদেশের শহরগুলো খুব দ্রুত বাড়ছে; বাড়ছে শহরের আয়তন, বাড়ছে এর জনসংখ্যা আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহন। বর্তমানের কিছু পরিকল্পিত মডেল শহর বাদ দিলে বাংলাদেশের প্রায় সব শহর গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে, যেখানে চলাচলের রাস্তার চাইতে প্রাধান্য পেয়েছে বসবাসের স্থাপনা, বাণিজ্যিক কেন্দ্র বা অন্যান্য পূর্ত কাজ।
এর ফলে এক সময় আমরা আবিষ্কার করলাম যে, একটা শহরের জন্য ন্যূনতম যে পরিমাণ রাস্তা থাকা প্রয়োজন তা আমাদের নেই। কিন্তু অন্যদিকে দ্রুত এবং অপরিকল্পিতভাবে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিএ)-এর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে নিবন্ধনকৃত মোটরযানের সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি, যার প্রায় ২০ শতাংশ নিবন্ধিত হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। যেখানে ঢাকা শহরের আয়তন পুরো বাংলাদেশের আয়তনের শতকরা প্রায় ১.৫ শতাংশ সেখানে পুরো বাংলাদেশের মোট মোটরযানের শতকরা প্রায় বিশ ভাগ মোটরযান এই ঢাকায় চলাচল করে।
উল্লেখযোগ্য হলো যে, ঢাকা শহরের মোট মোটরযানের প্রায় ৭০ ভাগ হলো ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল এবং এর বিপরীতে গণপরিবহনের সংখ্যা মাত্র শতকরা প্রায় তিন শতাংশ। একদিকে ব্যবহার উপযোগী রাস্তার পরিমাণ কম অন্যদিকে এত বিপুল জনসংখ্যার শহরে গণপরিবহনের তুলনায় যখন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হয় তখন যানজট অবশ্যম্ভাবী। এর সাথে যুক্ত হয় রাস্তার অব্যবস্থাপনা, যা এ সমস্যার ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি করে।
এ সমস্যা শুধু রাজধানী ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ এমন নয় বরং চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের প্রায় সব বড় বড় শহরেই তা ছড়িয়ে পড়ছে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে কার্যকর একটি উপায় হচ্ছে, গণপরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত ও আধুনিকায়ন করা।
পৃথিবীর বিভিন্ন শহর যাদের এ ধরনের সমস্যা ছিল তারা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম যেমন মেট্রোরেল, বাস র্যাপিড ট্রানজিট, লাইট রেল ইত্যাদি প্রবর্তন করার মাধ্যমে সফলতার সাথে তা সমাধান করেছে। ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেমকে মূলত পাঁচটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় যেমন, বাস র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম (বিআরটি), লাইট রেল ট্রানজিট সিস্টেম (এলআরটি), ট্রামওয়ে, মেট্রোরেল ও রিজিওনাল রেল সিস্টেম। প্রযোজ্যতা, স্থান, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, আর্থিক সক্ষমতা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন দেশের শহরে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেমের এক বা একাধিক শ্রেণির সমন্বয় দেখা যায়।