চিকিৎসক মেহের নিগার নিশির বাস রাজধানীর কল্যাণপুরে। গত নভেম্বরে তিনি বাংলামটরের 'এসএএস মার্বেল অ্যান্ড গ্রানাইট' নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ৪১ হাজার টাকার মার্বেল পাথর অর্ডার করেন। পুরো টাকা পরিশোধের পর কথা ছিল- তিন দিনের মধ্যে পণ্য পাবেন। এক মাস পরও পণ্য হাতে না পেয়ে ডা. নিশি ওই দোকানে যোগাযোগ করেন। পরে বিক্রেতা আরও ১০ দিন সময় চান। ওই সময় পার হওয়ার পরও পণ্য না পেয়ে ক্রেতা টাকা ফেরত চাইলে বিক্রেতা সে সময় পুরো টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান।
কারণ হিসেবে বিক্রেতা বলেন, এরই মধ্যে তার ক্রয়াদেশ অনুযায়ী কিছু পণ্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ক্রেতা নিরুপায় হয়ে ঘটনার চার মাস পর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে অধিদপ্তরের সহযোগিতায় অভিযোগের দু-এক দিনের মধ্যে সেই মার্বেল পাথর ডা. নিশি হাতে পান। এই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি সমকালকে বলেন, 'যদি ভোক্তা অধিদপ্তরে এ অভিযোগ করা না হতো, তাহলে হয়তো টাকা বা পণ্য কোনোটিই পেতাম না।'
গত এক যুগে ডা. নিশির মতো ৬৮ হাজার ৭০৩ জন ভোক্তা নানাভাবে প্রতারিত হয়ে অভিযোগ করেন ভোক্তা অধিদপ্তরে। প্রতিকারও পেয়েছেন এসব ভোক্তার অনেকে।
টাকা দিয়ে মানসম্পন্ন, নিরাপদ ও ভেজালমুক্ত পণ্য এবং সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে ভোক্তার। একই সঙ্গে অধিকার রয়েছে পণ্যের উপাদান, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, বিক্রয়মূল্য, পণ্যের মান ও কার্যকারিতা বিষয়ে জানার। দেশের অধিকাংশ মানুষ এসব সেবা থেকে বঞ্চিত। প্রতিনিয়ত তারা হচ্ছে প্রতারিত। ভোক্তাদের সুরক্ষা দিতে ২০০৯ সালে সরকার প্রণয়ন করেছে 'ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯'।
এ আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো, ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, ভোক্তা অধিকারবিরোধী কাজ প্রতিরোধ, অধিকার লঙ্ঘনজনিত বিরোধ নিষ্পত্তি, নিরাপদ পণ্য ও সঠিক সেবা নিশ্চিত করা, ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা, পণ্য ও সেবা ক্রয়ে প্রতারণা রোধ ও গণসচেতনতা তৈরি করা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভোক্তারাও যাতে সহজে অভিযোগ জানাতে পারে, সে জন্য 'ভোক্তা বাতায়ন' শীর্ষক হটলাইন সেবা চালু আছে। যে কোনো স্থান থেকে '১৬১২১' নম্বরে ফোন করে জানানো যাবে অভিযোগ।