জামালপুরের মেলান্দহে স্কুলছাত্রী আশামণি তার বাবা-মায়ের উদ্দেশে চিরকুট লিখে রেখে আত্মহত্যা করেছে। সেই চিরকুটে রয়েছে নিজের সল্ফ্ভ্রমহানির বেদনা ও আক্ষেপ। অভিযুক্ত স্বপন ইতোমধ্যে আটক হয়েছে; হয়তো বিচারও হতে পারে। কিন্তু এই সমাজের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া আশামণিকে আর ফেরানো যাবে না।
মনে পড়ছে আমার 'আমিনা ও মদীনার গল্প'র দুই চরিত্রের কথা। আমিনা ও মদীনা এ দেশেরই মেয়ে। রক্ষণশীল পারিবারিক গণ্ডির ভেতরে বসবাস করে বাইরের জগৎ সম্পর্কে অপার কৌতূহল নিয়ে বড় হয় তারা। পিতামাতার সতর্ক প্রহরায় বেড়ে ওঠা যৌবন ধুলায় লুণ্ঠিত হয়ে গেলে ওদের চারপাশে গড়ে দেওয়া বেড়ি হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। ওরা নিজের দৃষ্টি দিয়ে দেখতে শেখে। সঠিক পথের দিশা খুঁজে দেখার জন্য স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। আর তখনই বিপর্যয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা তাদের চেতনায় ঘা দিলেন। তিনি তার চাদর বাড়িয়ে দিয়ে সাহসী উচ্চারণে বললেন, 'আপনাদের কোনো লজ্জা নেই, সব লজ্জা আমাদের।' এ এক অপার বিস্ময় আমিনা ও মদীনার জীবনে। 'আমিনা ও মদীনার গল্প' মুক্তিযুদ্ধের সময়ের একটি বাস্তব সত্য।
আমিনা ও মদীনা যে বৈরী পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল, তা পরাধীন দেশে; মানবতাবিরোধী পরিবেশে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে আমিনা ও মদীনার মতো মর্মন্তুদ গল্প কি কাঙ্ক্ষিত ছিল? নানামাত্রিক নারী নির্যাতনের ছায়া তো প্রলম্বিত হচ্ছেই; ধর্ষণের মতো ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধির বিস্তারও যে কোনো শুভবোধসম্পন্ন মানুষকে উদ্বিগ্ন না করে পারে না। দেখা যাচ্ছে, এই অপরাধের সর্বোচ্চ দণ্ডের বিধান রেখেও ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণের ছায়া সরানো যাচ্ছে না। সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই উঠে আসছে ধর্ষণের খবর।
ধর্ষণের মামলার ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে জিইয়ে আছে কিছু প্রতিবন্ধকতা। এই প্রতিবন্ধকতার অন্যতম আইনের সংরক্ষিত ধর্ষিতার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিধান। সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্ষণের অভিযোগের বিচারের ক্ষেত্রে নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিধানটি বাতিল করতে যাচ্ছে সরকার। আইনের সংশোধনী আনতে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে ধারাটি সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক অংশীজনের মতামতও নেওয়া হয়েছে। বিলম্বে হলেও এ উদ্যোগের জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই।